ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি জেনে নিন

ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম না জানার কারনে, সুস্থতার পরিবর্তে আরও জটিলতায় পরতে হয়। রোগ আরও বৃদ্ধি পেতেও পারে অনিয়ম ও অসম্পূর্ণ চিকিসার ফলে। তাই প্রত্যেকেই ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে রাখা উচিত। কোন ঔষধ কখন কিভাবে কতদিন খেতে হবে তা জেনে নিন।

সাধারণ ব্যথা নাশক ঔষধ কিভাবে কতদিন খেতে হয়

সাধারণ ব্যথা নাশক যেমন NSAID ঔষধ সবসময় ভরা পেটে খেতে হবে। ভরা পেট বলতে কোন কিছু খাওয়ার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই খেয়ে নিবেন। এর সাথে যেকোন ১ টি এসিডিটি রোধ করার ঔষধ খেতে পারেন যদি এসিডিটির সমস্যা থাকে বা হওয়ার আশংকা থাকে।

ব্যথা দূর করার ঔষধ সর্বোচ্চ ১০-১৫ দিন পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে। এর বেশী খাওয়া উচিত হবেনা। কারন এসব ব্যথার ঔষধ দীর্ঘদিন খেলে লিভার ও কিডনীতে এফেক্ট পরতে পারে। তাই বলে একেবারেই খাওয়া যাবেনা এটা ভুল।

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিভাবে খাবেন

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সাধারণত খালি পেটে খেতে হয়। তবে কিছু ঔষধ ভরা পেটেও খাওয়া যায়। তবে ওমিপ্রাজল, প্যানটোপ্রাজল, ডেক্সিল্যান্সোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, এসব ঔষধ খালি পেটেই ভাল কাজ করে। তাছাড়া র‍্যাবিপ্রাজল ও সিরাপ জাতীয় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ ভরা পেটে খেতে হয়।

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কত দিন খেতে হয় এটা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন থাকে। এসব ঔষধ সর্বোচ্চ ২ মাস পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে, এর বেশী খাওয়া ঠিক নয়। ২ মাস খাওয়ার পর যদি ভাল না হয়, তাহলে ইন্টারনাল মেডিসিন যেমন- গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি ডাক্তার দেখিয়ে, উন্নত চিকিৎসা নিতে হবে।

এন্টিবায়োটিক খাওয়ার নিয়ম

এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবেনা। এন্টিবায়োটিক ঔষধ যখন খাওয়া শুরু করবেন, প্রথমত সময়টা দেখে নিবেন। যে ঔষধ ৬ ঘন্টা পর পর খেতে হবে অর্থাৎ দৈনিক ৪ বার খাওয়ার কথা বলবে, এগুলো টাইম মেনটেইন্ট করে সঠিক সময়ে খেতে হবে।

আবার যে ঔষধ ৮ ঘন্টা পর পর খেতে হবে, অর্থাৎ দৈনিক ৩ বার খাওয়ার কথা বলবে, সেটা অনুরূপ ঘড়ি দেখে সকাল, দুপরের শেষ ভাগে অর্থাৎ প্রায় ৩ টার দিকে আবার রাত ১০ঃ৩০ টার পর আরেকটা খেতে হবে। এভাবে যে এন্টিবায়োটিক দৈনিক ২ বার বা ১২ ঘন্টা পর পর এবং দৈনিক ১ বার অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ১ বার যে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কথা বলা হয় সেটা আরও বেশী গুরুত্ব দিয়ে সঠিক সময়ে খেতে হবে। তাহলেই এন্টিবায়োটিকের সঠিক কার্যকারীতা পাওয়া যাবে।

শুধু তাই নয়, যেসকল এন্টিবায়োটিকের কোর্স যতদিন, ঠিক ততদিনই খেতে হবে। যেমন ৭ দিনের কোর্স হলে অবশ্যই ৭ দিন পুর্ন করতে হবে। তা নাহলে এই এন্টিবায়োটিক আপনার জন্য রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাবে। ফলে পরবর্তীতে ঐ এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হলে সেটা আপনার জন্য কার্যকারীতা হারাবে।

ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম খাওয়ার নিয়ম

ভিটামিন সাধারণত রাতে খাওয়াই ভালো, তবে যেকোন সময়ই খাওয়া যাবে। কিন্তু ক্যালসিয়াম কখনই রাতে খাবেননা। কারন ক্যালসিয়াম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সকালে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশী। তাই ক্যালসিয়াম খাওয়ার উত্তম সময় সকালে অথবা দুপুরে।

আয়রন জাতীয় ঔষধ কখন খাবেন জানেন? ক্যালসিয়ামের মতোই সকালে অথবা রাতে খেলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। কিন্তু ক্যালসিয়াম ও আয়রন আবার একত্রে খাওয়া ভুল। কারন অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম+আয়রন শরীরের শোষন প্রক্রিয়ায় ব্যাহত হয়, যার ফলে অধিকাংশ আয়রন ও ক্যালসিয়াম প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। তাই একত্রে খাওয়ার প্রয়োজন হলে, সকালে ক্যালসিয়াম ও দুপুরে আয়রন এভাবে আলাদা করে খাবেন।

উচ্চরক্তচাপ ও হার্টের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

উচ্চরক্তচাপ অর্থাৎ হাইপ্রেসার ও হার্টের ঔষধ প্রায় সমগোত্রীয়। এসব ঔষধ খুব সতর্কতার সাথে নিয়ম করে ডাক্তার যেভাবে লিখবেন ঠিক এভাবেই খেতে হবে। প্রেসক্রিপশনে একটু খেয়াল করে দেখবেন- ডান দিকে লিখা আছে চলবে। যে ঔষধের পাশে চলবে লিখা আছে ঐ ঔষধ খাওয়ার নিয়ম হলো, আপনি যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন খাবেন। ঔষধ খাওয়ার পরও প্রতি মাসে চেকআপ করার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

যদি কখনও ঔষধ খাওয়া অবস্থায় কোন সমস্যা দেখা যায়, তবুও ডাক্তারকে না বলে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করা যাবেনা। ঔষধ খেয়ে যদি আপনি সম্পুর্ন ভাল হয়ে গেছেন মনে হয়, এবং যদি মনে করেন আর হয়ত ঔষধ খাওয়া লাগবেনা। তাহলে আবারও অসুস্থ হওয়ার আশংকা থাকবে। তাই ঔষধ খাওয়া লাগবে কিনা ডাক্তার যদি না বলে, তাহলে বন্ধ করবেননা।

ড্রাগ ইন্টারেকশন কি

ড্রাগ ইন্টারেকশন ঔষধ সেবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন, যা বাংলায় অন্য ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া বা আন্তক্রিয়া বলে। যেমন, একটি ঔষধের সাথে আরেকটি ঔষধ খেলে হয়ত ঐ ঔষধের ক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে অথবা কমে যেতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একসাথে একাধিক ঔষধ খাওয়া উচিত না।

Leave a Comment