বেলের শরবতের উপকারিতা কি এগুলো জানতে হলে আজকের লেখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেল প্রকৃতির দেয়া এক অসামান্য উপহার, যা জানলে আপনিও সৃষ্টিকর্তার প্রশংসায় বিভুর হয়ে যাবেন। এতো এতো উপকারী ফলফলাদি আমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, অথচ আমরা এগুলো সম্পর্কে জানিইনা।
বেল কেন খায়
বেল ফাইবারের একটি প্রসিদ্ধ উৎস। প্রচুর আশযুক্ত এই ফলে উপকারী ফাইবার থাকায়, ডায়বেটিস, আইবিএস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগমুক্তির উপাদান আছে। আমারা শুধু নিয়ম মেনে খেয়ে যেতে পারলে, এই পথ্যের মাধ্যমেই উপশম পাওয়া যাবে।
বেলের উপকারিতা কি
বেলে হাজারো পুষ্টিগুন আছে, উল্লেখযোগ্য কয়েকটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। বেল আপনার শরীরিক শক্তি যোগাতে অনন্য ভুমিকা রাখবে। বেলের শরবত খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হবে। যাদের মল খুব শক্ত হয়, তাদের জন্য বেল খুব উপকারী। এছাড়াও আরও কিছু উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
বেলের শরবতে ল্যাকটোভেটিভ পুষ্টিগুন থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যে চমৎকার কাজ করে। প্রতিদিন একটি পাকা বেলকে চালনি বা প্লাস্টিকের ঝাকি দিয়ে ছেকে সমপরিমাণ পানি ও চার ভাগের এক ভাগ ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে নিবেন। ডায়বেটিস না থাকলে আখের গুড় ও সামান্য লবন দিয়ে ভাল করে নেড়ে নিন। এভাবে কয়েক সপ্তাহ শরবত বানিয়ে খাবেন। হাজার টাকার ঔষধও এভাবে কাজ করবেনা। যতটা এই বেলের শরবতে করবে। এটা পরিক্ষিত একটা রেমিডি।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য
পাকা বেলে মেথানল নামের একটি উপাদান থাকায়, রক্তে সুগারের পরিমান কমিয়ে রাখতে সক্ষম। পর্যাপ্ত ফাইবার থাকায় ডায়বেটিস এর রোগীদের একটা পথ্য হিসাবে বিবেচিত করা হয়। তবে পাকা বেলের শরবত বানানোর সময় চিনি বা গুড় ব্যবহার করা যাবেনা। কারন চিনি বা গুড় ডায়বেটিস বাড়িয়ে দিতে পারে।
হজমশক্তি বাড়ানোর উপায়
বেলের শরবতে বা শাসে প্রচুর ফাইবার আছে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। নিয়মিত বেল বা বেলের শরবত খেলে হজমের দূর্বলতা দূর করে। এসিডিটি থাকলে সেরে যায়। পাকস্থলীর দূর্বলতার জন্যই সময়মতো হজমপ্রক্রিয়ায় ব্যাহত হয়। পাকস্থলীকে শক্তিশালী করার জনয় আঁশযুক্ত খাবার খেতে হয়। বেলের শরবতে এসমস্যার সমাধান করা যায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে
বেলে রয়েছে এন্টি প্রেলিফরেটিভ ও এন্টি মুটাজেন উপাদান যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। যারা এসব সমস্যায় বা ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন, অবশ্যই সপ্তাহে অন্তত ২ বার বেলের শরবত খাবেন। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যাবে। সেই সাথে এনার্জিও পাবেন। শারীরিক দূর্বলতায়ও বেলের শরবত খুব কার্যকর।
আইবিএস থেকে চিরমুক্তি
বেলের শরবতের কথা জানলেন, কিন্তু এটা কি জানেন? কচি বেল থেকে কি হয়?
শুনলে অবাক হবেন- যার কোন ভাল ঔষধ এখনো আসেনি, সেই আইবিএস থেকে চিরমুক্তি পেতে বেলশুঠ পরিক্ষিত পথ্য। হ্যাঁ, বেলশুঁঠ প্রতিদিন রাতে ৩-৪ টুকরো ভিজিয়ে সকালে পানি খাবেন। ৩-৪ মাস পর্যন্ত, দেখবেন আইবিএস ভাল হয়ে গেছে।
আইবিএস কি
আইবিএস হলো- ইরিটেবল ভাওয়েল সিনড্রোমের সংক্ষিপ্ত নাম। যার উপসর্গ হলো- ভালমন্দ কিছু খেলে পেটে গুরগুর করে, কখনও পাতলা কখনও শক্ত, কখনও ডায়রিয়ার মতো হয়ে যায়। এটা সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস্ট্রিক বা অন্ত্রে কোন প্রকার ইনফেকশন থেকে হতে পারে। অনেক সময় কোলন থেকেও এগুলো হয়। নিয়মিত বেল বা বেলের শরবত খেলে আইবিএস থেকে চিরমুক্তি পাওয়া যায়।
বেলশুঁঠ খাওয়ার নিয়ম
বেলের শরবত হয়ত সবসময় পাওয়া যায়না, তাই বাজার থেকে বেলশুঁঠ সংগ্রহ করে নিতে পারেন। এবার আস্তো হলে, রাতে ভিজিয়ে সকালে পানি খাবেন, আবার এগুলোতে পানি দিয়ে রাখবেন, রাতে খেয়ে অবশিষ্ট গুলো ফেলে দিয়ে নতুনকরে ভেজাবেন।
যদি পাউডার হয়, তাহলে খুব উপকার পাবেন। ১ চামচ পাউডার ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে গুর অথবা চিনি পরিমাণমতো দিবেন। এখন ১ চামচ ইসুবগুলের ভুষি ও তালমাখনা দিয়ে নেড়ে খেয়ে নিবেন। রোজ সকালে খেলেই ভাল উপকার হয়। এই পথ্যটা সবসময় খেলে, কখনও কোলনে সমস্যা হবেনা, হজমে ত্রুটি থাকবেনা। গ্যাস্ট্রিক কমে যাবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
ত্বকে লাবণ্য ফিরে আসবে। ত্বকের দাগ কমবে।
ইনশাআল্লাহ আজকে যা শুনলেন, তা অযথা কোন গল্প নয়, এগুলো হাজার বছরের আধনিক হারবাল বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মন্তব্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যমতে বেলের মতো বেল পাতারও বেশ উপকারি শক্তি রয়েছে। বেল পাতা ভিজিয়ে পানি খেলে ত্বক কোমল ও মসৃন হয়। ত্বকের দাগ বা তিলজাতীয় ছোট ছোট দাগগুলো কমে যায়। এছাড়াও আরও বেশ গুনাগুন রয়েছে।
তবে বেলের গাছ রুপায়ন কমে যাওয়ায়, বেল এখন প্রায় দূর্লভ হয়ে আসছে। একদিন হয়ত অর্গানিক সব খাদ্যসমূহ আমাদের জন্য এতোটাই দূর্লভ হবে। কেমিক্যাল ছাড়া আর কোন উপায়ই থাকবেনা। এখনও সময় আছে, আমরা এগুলোকে মুল্যায়ন করা শিখতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এগুলোর ব্যাবহার শেখাতে হবে। নাহয় একসময় আমাদেরকে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবেনা।
আরও পড়ুন – লেবুর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম