সুখে থাকার উপায় ও কিছু কৌশল জেনে নিন

সুখি মানুষ কে? বা সুখ বলতে কি বুঝায় জানেন? প্রচুর্য্যে বেড়ে উঠা আর বিলাসী জীবন যাপন করার নামই কি সুখি জীবন? সুখের সংজ্ঞা না জানলে হয়ত আপনার কাছে তাই মনে হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে সুখ কি? আজকে তা নিয়ে আলোচনা করবো। সুখে থাকার উপায় ও কিছু কৌশল জেনে নিন

সুখের সংজ্ঞা কি

সুখের সংজ্ঞা বলতে যা বুঝায় একটি দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানসিক চাপমুক্তভাবে হাসি আনন্দে কেটে যাওয়া। যেন অন্যরা সুখি লোকটাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, এবং তাকে নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করে যে, এই লোকটি কিভাবে এতো হাসি আনন্দে থাকতে পারে। কোন রাগ ঢাক নেই, মন খারাপ হয়না, সর্বদা হাসিখুশি থাকে কেমনে? যা বর্তমান সময়ে প্রায় অসম্ভব।

সুখি মানুষ কে?

যার তেমন কোন কষ্ট নাই, কোন দূরারোগ্যে ভূগছেননা, পারিবারিক কলহ নাই, আকাশচুম্বী আশাও নাই, সাদামাটা জীবনের ঐ মানুষগুলোকে সুখি মানুষ বলে। তেমনি সারাদিনের ঝামেলাযুক্ত মানুষগুলো তার বিপরীত। শোবার সময় নাই, পরিবারের লোকদের সাথে সময় দেয়ার মতো অবসর না থাকায় তারা কিন্তু সম্পদের মালিক হতে পারে, পার্থিব জীবনে তারা সুখি নয়।

দুঃখি মানুষ বলতে কাকে বুঝায়

পৃথিবীতে দুঃখি মানুষের সংখ্যাই বেশি, তার মধ্যে ধনী ব্যাক্তিরাই বেশি অসুখি। এটা শুনে হয়ত অবাক হবেন যে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে ৮৫% ধনীরাই প্রকৃতপক্ষে সুখি নয়, তারা প্রাচুর্য্যবান হতে পারে, কিন্তু মানসিকভাবে তারা সুখি হয়না। কারন তারা প্রাচুর্য্যের পেছনে এতো সময় দেয় যে, পরিবারের অন্যদের সাথে সময় না দেয়ায় পারিবারিকভাবেও তারা অসুখি। তাদের পরিবারের কাছে ইয়িনি শুধু একটি সম্পদ তৈরির মেশিন।

এছাড়া গরীবদের মাঝেও কিছু দুঃখি মানুষ দেখা যায়, এগুলো নিয়ে বেশ কয়েকজন গবেষক বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়েছেন- মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ হলো যে তার লোভকে সংযত করতে পারেনা সে সুখি হতে পারেনা। অন্যান্য কারন উপার্জনে অক্ষমতা, পারিবারিক অশান্তি, ছেলে মেয়ের অবাধ্যতা, বাসস্থান সঙ্কঠ ও দূরারোগ্যে ভূগতে থাকা অসুখি হওয়ার কারন হতে পারে।

এছাড়াও মানুষের কিছু অভ্যাসগত কারনে মানুষ অসুখি হয়। বেকারত্ব দূঃখের একটি কারন হতে পারে। পর সমালোচনা করা ব্যাক্তিরা সুখি হয়না। অতিরিক্ত রাগ শরীর ও সাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। যারা ছাড় দিতে জানেনা তারাও সুখের নাগাল পেতে সমস্যা হয়। দাম্পত্য জীবনে যারা সুখি নয় তারা সর্বক্ষেত্রেই দুঃখি। তাছাড়া অতিরিক্ত চাহিদার নারী-পুরুষ খুব কমই সুখী হয়। পর সুখে কাতর হওয়া হিংসুক মনের যে কোন ব্যাক্তিই মানসিকভাবে চরম দুঃখি হয়।

সুখে থাকার কিছু কৌশল

পৃথিবীতে সুখে থাকাটা এখন সবচেয়ে কঠিন। অর্থ সম্পদ উপার্জন করা যতটা সহজ সুখ অর্জন করা ততটা সহজ নয়। চাইলেই কেউ সুখি হতে পারবেনা, যদি কেউ নিজকে অসুখি মনে করেন, তাদেরকে সুখি হওয়ার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা উচিৎ।

সুখি হওয়ার উপায় কি

  • শারিরীকভাবে সুস্থ্য থাকার চেষ্টা করতে হবে, কারন অসুস্থ্য মানুষ নিজকে সুখি ভাবতে পারেনা।
  • পরিবারের লোকজনের সাথে ঠিকমতো সময় দিতে হবে, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট একটি সময় করে পারিবারিক মিটিং করার ব্যাবস্থা করতে হবে।
  • কোন অমিমাংসিত বিষয়ে সমোঝতা করা শিখতে হবে বা তার অভ্যাস করতে হবে।
  • অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা মানুষগুলো সুখি হয়, তাই অতিরিক্ত চাহিদা রাখার অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করতে হবে।
  • পরসমালোচনাকারি কখনো সুখি হয়না, কারন এটি একটি বদভ্যাস। আর কোন বদভ্যাস জীবনে চলমান থাকলে এটা নিয়ে সুখে থাকা যায়না।
  • নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবনে সন্দেহ একটি মারাত্মক ব্যাধি, এই ব্যাধির চিকিৎসা হলো- একে অপরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। তাহলেই পরস্পর সুখি হতে পারবেন।
  • অতিরিক্ত রাগী মানুষ শুধু অসুখিই হয়না- বরং অকালে মারাও যায়। তাই যখন কোন কারনে রাগান্বিত হওয়ার উপক্রম হবে, তখন শান্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কারন জীবনের মুল্য অনেক বেশি। রাগ কন্ট্রোল করা ব্যক্তিরা সুখিও হয়।
  • রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠে যাওয়া ব্যক্তিরা অন্যদের চেয়ে সুখি হয়। গবেষণায় প্রমানিত যে, ঘুম কম হওয়া ব্যাক্তিদের মেজাজ খিটখিটে থাকে। যার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়।

শুধু চিকিৎসা নিলেই সবকিছু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না। পাশাপাশি কিছু সতর্কতা ও সচেতনতার প্রয়োজন। আর সুখি হতে শুধুই সচেতনতা অবলম্বন ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিস্তিতির সাথে নিজকে মানিয়ে নিতে পারলেই প্রত্যেক মানুষ সুখি হতে পারবে। আসলে সর্বদিকে কেউই সুখি নয়, কিন্তু চাইলে সর্বদিকে সুখি হওয়া যায়।

আরো পড়ুন- টাইমেক্স ট্যাবলেট কিসের ঔষধ জেনে নিন

Leave a Comment