কমেট ৫০০ ট্যাবলেট কিসের ঔষধ ও খাওয়ার নিয়ম | Comet 500 Tablet

কমেট ৫০০, কমেট এক্সআর ৫০০, কমেট ৮৫০, কমেট এক্সআর ১ গ্রাম ট্যাবলেট, প্রতিটি ট্যাবলেটে আছে মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড। জেনে নিন কিসের ঔষধ ও খাওয়ার নিয়ম।

কমেট কিভাবে কাজ করে

মেটফরমিন একটি উচ্চ শর্করারোধী যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয় এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ও খাবার গ্রহণের পর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। মেটফরমিন যকৃত কর্তৃক গ্লুকোজের উৎপাদন কমায়, অস্ত্র হতে গ্লুকোজের শোষণ হ্রাস করে এবং সর্বোপরি টিস্যুর শর্করা গ্রহণ ও ব্যবহারকে বাড়িয়ে দেয়। মেটফরমিন সালফোনাইলইউরিয়াগুলোর মত টাইপ-২ ডায়াবেটিক অথবা সুস্থ ব্যক্তিদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া অথবা রক্তে হাইপারইনসুলিনেমিয়া ঘটায় না ।

কমেট ট্যাবলেট এর কাজ কি

কমেট (মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট) খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী ও শিশুদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশিত। কমেট’ এক্সআর (মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এক্সটেনডেড রিলিজ ট্যাবলেট) খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশিত ।

কমেট ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

কার্যকারিতা ও সহনশীলতার ভিত্তিতে এবং সর্বোচ্চ দৈনিক নির্দেশিত মাত্রা লক্ষ্য রেখে কমেট এবং কমেট এক্সআর এর মাত্রা ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে কমেট এর সর্বোচ্চ দৈনিক নির্দেশিত মাত্রা হচ্ছে ২৫৫০ মি.গ্রা. এবং শিশুদের (১০-১৬ বছর) ক্ষেত্রে তা ২০০০ মি.গ্রা.। অন্য দিকে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে কমেট এক্সআর এর সর্বোচ্চ দৈনিক নির্দেশিত মাত্রা হচ্ছে ২০০০ মি.গ্রা.। কমেট বিভক্ত মাত্রায় খাবারের সাথে এবং কমেট এক্সআর সাধারণত প্রতিদিন রাতে একবার খাবারের সাথে গ্রহণ করা উচিত।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কমেট (মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট) এর সাধারণ প্রারম্ভিক মাত্রা হচ্ছে ৫০০ মি.গ্রা. দিনে দুইবার অথবা ৮৫০ মি.গ্রা. দৈনিক একবার খাবারের সাথে। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ মি.গ্রা. অথবা প্রতি দুই সপ্তাহে ৮৫০ মি.গ্রা. বিভক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি করে দৈনিক সর্বোচ্চ গ্রহণ মাত্রা ২০০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। প্রারম্ভিক মাত্রা দৈনিক দুইবার ৫০০ মি.গ্রা. থেকে দুই সপ্তাহ পর দৈনিক দুইবার ৮৫০ মি.গ্রা. মাত্রা প্রয়োগ করে রোগীদের পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।

মাত্রা বাড়ালে কমেট দিনে কত বার খাওয়া যায়

দৈনিক মোট মাত্রা ২০০০ মি.গ্রা. এর উপরে হলে তা রোগীদের সহনশীলতার জন্য তিনবার বিভক্ত মাত্রায় খাবারের সাথে গ্রহণ করা যেতে পারে। কমেট’ এক্সআর (মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এক্সটেনডেড রিলিজ ট্যাবলেট) এর সাধারণ প্রারম্ভিক মাত্রা হচ্ছে দৈনিক ৫০০ মি.গ্রা. ট্যাবলেট রাত্রে একক মাত্রায় খাবার সাথে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৫০০ মি.গ্রা. হারে সর্বোচ্চ ২০০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত মাত্রা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

যদি এতে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তবে কমেট ও এক্সআর ১০০০ মি.গ্রা. দৈনিক দুইবার করে প্রয়োগের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। যে সকল রোগী ইতিমধ্যে কমেট গ্রহণ করেছেন তাদের মোট গ্রহণের পরিমাণ ঠিক রেখে কমেট এক্সআর দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে এবং তা সর্বোচ্চ দৈনিক ২০০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

কমেট কিভাবে খেতে হয়

কমেট এক্সআর কখনই চুষে বা ভেঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। কমেট এবং কমেট এক্সআর এর প্রারম্ভিক মাত্রা যতদূর সম্ভব কম হওয়া উচিত যাতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কাঙ্খিত অবস্থায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন প্রয়োগমাত্রা নিরূপন করা যায় এবং সেই সাথে পরিপাকতন্ত্রের অস্বস্তিও যেন কম হয়।

শিশুদের কমেট খাওয়ার নিয়ম

শিশুদের কমেট খাওয়ার নিয়ম- মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এর নিরাপদ ব্যবহার এবং কার্যকারিতা ১০ বছরের নীচের শিশুদের ক্ষেত্রে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১০ বছরের উপরের শিশুদের জন্য, কমেট এর সাধারণ প্রারম্ভিক মাত্রা হচ্ছে প্রতিবার খাবারের সাথে ৫০০ মি.গ্রা. করে দৈনিক দুইবার। মাত্রা বৃদ্ধির হার হওয়া উচিত সপ্তাহে ৫০০ মি.গ্রা. করে বিভক্ত মাত্রায় দৈনিক সর্বোচ্চ ২০০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত।

কমেট ট্যাবলেট এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কমেট ট্যাবলেট এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে- ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, বমি, পেট ফাঁপা, দুর্বলতা, বদহজম, পাকস্থলীর অস্বস্তি, মাথা ব্যথা প্রভৃতি। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও কমেট খাওয়া বন্ধ করা যাবেনা।

কমেট ট্যাবলেট সেবনে সাবধানতা

চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে মেটফরমিনের শরীরে সঞ্চয়ের ফলে ল্যাকটিক এসিডোসিস হতে পারে যদিও এ ধরণের ঘটনা কদাচিৎ ঘটে।

অন্য ওষুধের সাথে কমেট ট্যাবলেট এর প্রতিক্রিয়া

মেটফরমিন ও ফুরোসেমাইড একত্রে সেবনে দীর্ঘমেয়াদী কোন প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। নিফিডিপিন মেটফরমিনের শোষণ বাড়ালেও নিফিডিপিনের উপর মেটফরমিনের সামান্য প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ক্যাটায়নিক ড্রাগ (যেমন- অ্যামিলোরাইড, ডিগোক্সিন, মরফিন, প্রোকেইনামাইড, কুইনিডিন, কুইনিন, রেনিটিডিন, ট্রায়ামটিরিন, ট্রাইমিথোপ্রিম অথবা ভেনকোমাইসিন) যারা কিডনির মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে নিষ্কাশিত হবার সময় মেটফরমিনের সাথে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে।

সিমেটিডিনের ফার্মাকোকাইনেটিক বৈশিষ্ট্যের উপর মেটফরমিনের কোন প্রভাব নেই। কিছু কিছু ওষুধ যেমন থায়াজাইড এবং অন্যান্য মূত্রবর্ধক, কর্টিকোস্টেরয়েড, ফেনোথায়াজিন, থাইরয়েড প্রডাক্ট, ইস্ট্রোজেন, মুখে খাবার জন্মনিরোধক, ফিনাইটোয়েন, নিকোটিনিক এসিড, সিমপ্যাথোমিমেটিক, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং আইসোসরবাইড হাইপোগ্লাইসেমিয়া তৈরি করতে পারে এবং এসব ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে

গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে কমেট ট্যাবলেট এর ব্যবহার

প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরি বি। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন দিয়েই চিকিৎসা করা উত্তম। মেটফরমিন বা মেটফরমিন এক্সটেনডেড রিলিজ ট্যাবলেট খুব প্রয়োজন ছাড়া গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা উচিত নয়।

স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে কমেট ট্যাবলেট এর ব্যবহার

এ অবস্থায় যেহেতু হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দেবার সম্ভাবনা থাকে সেহেতু অবস্থার গুরুত্ব বুঝে স্তন্যদান বা ওষুধ দুটোর যে কোন একটা বেছে নেয়া যেতে পারে।

কমেট ট্যাবলেট সেবনে সতর্কতা

মেটফরমিন অধিক পরিমাণে কিডনী দ্বারা নিষ্কাশিত হয়। কিডনীর কার্যকারিতার বিভিন্ন মাত্রার ভিত্তিতে ল্যাকটিক এসিডোসিস ও মেটফরমিন জমাট বাধার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এ কারণে যে সকল রোগীর ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের উর্দ্ধমাত্রার চেয়ে বেশি থাকে, তাদেরকে মেটফরমিন দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত নয়। অধিক বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য সতর্কতার সাথে ন্যূনতম মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিডনীর কার্যকারিতা হ্রাস পায় ।

কমেট ট্যাবলেট এর প্রতিনির্দেশনা কি

মেটফরমিন নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না:
১. কিডনির সমস্যা বা অকার্যকারিতার ক্ষেত্রে (রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা মহিলাদের ১.৪ মি.গ্রা./ডেসিলিটার বা পুরুষের ক্ষেত্রে ১.৫ মি.গ্রা / ডেসিলিটার এর বেশি হলে অথবা মূত্রে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন হলে)।
২. মেটফরমিন বা এর যে কোন উপাদানের প্রতি সংবেদনশীলতা।
৩. স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী মেটাবলিক এসিডোসিস, কোমা বা কোমাব্যতীত ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস।

আরো পড়ুন- সর্দি কাশি এলার্জি ও দাউদের ঔষধ এর নাম এবং খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment