ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ জেনে নিই। ড্রাগন ফল আমাদের এখন মোটামুটি বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। এর চাহিদা ও চাষাবাদ দিনদিন বেড়েই চলছে। ৯০ এর দশক থেকে চাষ শুরু হলেও, তখন এই ফলটাকে সবাই চিনতোনা। আজ শুধু চিনেইনা, বরং এর জন্য ফল দোকানে মাঝে মাঝে ভীরও দেখা যায়। আসুন জেনে নিই ড্রাগন ফল সম্পর্কে।
ড্রাগন ফল প্রাকৃতিক ভিটামিন, খনিজ ও মিনারেলস এ ভরপুর। এই মৌসুমি ফল খাওয়ায় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পুরন করে। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম এই ড্রাগন ফল। প্রথমদিকে শহরাঞ্চলে চাহিদা থাকলেও এখন গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কাছেও ড্রাগন ফল একটা পরিচিত নাম।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিমান জেনে নেয়া যাক
ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর এই ড্রাগন ফলে কয়ালরীর মাত্রা খুবই কম। তবে ডায়েটরী ফাইবার আছে প্রচুর। এক কাপ ড্রাগন ফলের শাসে ১৩৬ ক্যালরী খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়, প্রোটিন প্রায় ৩ গ্রাম, ৭ গ্রাম ফাইবার পাবেন ০ গ্রাম ফ্যাট, ৮% আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম ১৮% পাওয়া যাবে। ৯% ভিটামিন-সি এবং ৪% ভিটামিন-ই পাওয়া যায়। এতো সুন্দর একটা কম্বিনেশন আছে এই ড্রাগন ফলে, যা সবার জন্যই আদর্শ বলা যায়।
এছাড়াও ফ্লাভোনয়েড, ফেনোলিক এসিড এবং বিটাসয়ানিন এর মতো এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ড্রাগন ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অসাধারণ। প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলো মানবদেহের কোষগুলোকে ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে। ইহা এক প্রকার অণু যা ক্যান্সার ও অকাল বার্ধক্য তৈরি করে।
ড্রাগন ফল ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায়, ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র রোগের আশংকা কমিয়ে দেয়, বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এই ফল নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য ঠিক রাখে। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যান্ত প্রয়োজন।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলো কি
ড্রাগন ফলের ক্যান্সারবিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকায়, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চমৎকার ভুমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি এর প্রভাবে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে। দীর্ঘ ও জটিল রোগে আক্রান্ত যেমন- অয়ালজাইমা, ক্যান্সার, ডায়বেটিস ও পারকিনসনের মতো রোগ সারাতে সাহায্য করে এবং এসমস্ত রোগকে বাধাপ্রধান করে।
ড্রাগন ফল হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গে বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফাইবার থাকায় পরিপাকতন্ত্রকে পরিপূর্ণ করে তুলতে সহায়তা করে।
হার্টের জন্য উপকারী ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফল হার্টের জন্য খুব উপকারী। এর শাসে থাকা ছোট ছোট বীজে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ এসিড আছে। কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজে বা হার্টের দূরবলতায় এসব উপাদান খুব উপকারী হয়ে থাকে। এছাড়াও উচ্চরক্তচাপ, ওজন নিয়ন্ত্রণেও এই ফল নিয়মিত খেতে পারেন।
অযত্ন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার কারনে অকাল বার্ধক্য চলে আসলে, নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে, ত্বকে গ্লেজিভাব, টানটান ও চুলের রুক্ষতা দূর করে তারুন্য দীপ্ত একটা জীবন উপভোগ করা যাবে। যৌবন ধরে রাখতে ড্রাগন ফলের জুস পুরো মৌসুম জুড়ে খেতে পারেন। ত্বক ও চুলের জন্য বিশেষ ফলপ্রসূ হবে।
হাড় পুনর্গঠনে ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফলে ১৮% ম্যাগনেশিয়াম থাকায় হাড়ের জন্যও খুব উপকারী। হাড় ফেটে যাওয়া, জয়েন্টে ব্যথা, ফ্র্যাকচার বা ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। এছাড়াও হাড়কে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারে এই ফলের শাস খেলে। হাড়ের সুস্থতা আমাদের প্রত্যেরই কাম্য। তাই সিজন এলেই এই ফল খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
চোখের জন্য উপকারী ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলে বেটা-ক্যারোটিন আছে, যা চোখের ছানি পড়া এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এছাড়াও চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে বাচিঁয়ে রাখতে সহায়তা করতে পারে।
গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারী ফল
ড্রাগন ফলের শাসে ভিটামিন-বি এর উপস্থিতি থাকায়, গর্ভবতী নারীর জন্যও উপকারী। আয়রন, ফোলেট জাতীয় ফল গর্ভবতী নারীদেরকে খাওয়াবেন। তাতে আগত সন্তানের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। নবজাতকের জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম উভয়ের জন্যই কার্যকরী, নবজাতককে হাড় গঠনে খুব সহায়তা করবে। ম্যাগনেশিয়াম মহিলাদের পোস্টমেনোপোজাল এর জটিলতায় কার্যকর।
ড্রাগন ফলের দাম কেমন হয়
ক্যাক্টাস জাতীয় গাছ থেকে পাওয়া ফল চাষ করে এখন অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতেছেন। ফলন ও চাষ বেশী হলে দাম কমে যাওয়ায় চাষীরা ছন্দ হারিয়ে ফেলে, আবার যখন চাহিদা বাড়ে, তখন আগ্রহী হয়। এই অবস্থায় দামের মধ্যেও এরকম অবস্থা হয় – কখনও ২৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায়, আবার কখনও ৪-৫ শতেও পাওয়া যায়না।
তবে, উপকারী এই ড্রাগন ফলের চাষাবাদ ও চাহিদা সবসময় একইরকম থাকুক। এবং মৌসুমে যেন সব জায়গায় পাওয়া যায়, এমনটি আমাদেরও কামনা থাকবে। সেই সাথে পাঠকগনকে জানাতে চাই, পুষ্টিগুন টিম একটি অর্গানিক ফুড বা হারবাল ফুড সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদে পৌছে দেয়ার জন্য, উদ্যোগ নিয়েছে। আপনি আমাদের প্রোডাক্টগুলি নিয়ে যাচাই করার আহবান করছি। কোন ধরনের লো কোয়ালিটি প্রোডাক্ট আমরা বাজারজাত করিনা। কারন এটাকে আমরা সেবামুলক পেশা হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। লেখাটা কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন।
আরও পড়ুন – বাদামের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম