হরিতকির উপকারিতা ও হরীতকি খাওয়ার নিয়মসহ আজকে সবার সামনে উপস্থাপন করতে চাচ্ছি। আশাকরি এই লেখায় এমন কিছু জানতে পারবেন, যা আগে কখনও জানেননি। কবিরাজগন একে অমরফল নামেও ডাকতেন। হরিতকির সিক্রেট গুন হলো, চা, পান, সিগারেটের নেশা ছাড়তে শতভাগ কাজ করে।
হরীতকীর ইংরেজী নাম : Yellow Myrobalan
হরিতকির বৈজ্ঞানিক নাম : Terminalia chebul
হরিতকির জাত ও বৈশিষ্ট্য
ত্রিফলা পরিবারের অন্যতম সদস্য হলো হরীতকী । এর গাছ ৬০ থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় । পাতার আকার গোল , অনেকটা ডিমের মতো । ফুল আকারে ছোট এবং সাদা । চৈত্র বৈশাখ মাসে গাছে ফুল ফুঠে । বহু ধরনের হরীতকীর মধ্যে ৭ শ্রেণির হরীতকী উল্লেখযোগ্য । সেগুলো হলো-
বিজয়া হরীতকী দেখতে লাউয়ের মতো, রোহিনী আকার সম্পূর্ণ গোল, অনেক ছোট, কিন্তু দানা অনেক বড় হয়, অভয়া- দেখতে ছোট হলেও ওজনে অনেক ভারি মনে হয়। গায়ের শিরাগুলো স্পষ্ট এবং ৫ টি শিরা ভালোভাবে বোঝা যায়, আকৃতি গোল। অমৃতা- ভেতরে শাঁসভরা এবং দানাদার আকার ছোট, জাবন্তী- খুব ছোট, এ হরিতকির গায়ে ৩ টি শিরা থাকে।
হরীতকির উপকারিতা
হরীতকীর গুঁড়ো নারকেলের সঙ্গে ফুটিয়ে মাথায় লাগালে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ে অপরদিকে হরীতকীর গুঁড়া পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ত্বকের চমক বাড়ে। অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হরীতকী। রাতে শোওয়ার আগে অল্প বিট লবনের সঙ্গে ১/২ গ্রাম লবঙ্গ অথবা দারুচিনির সঙ্গে হরতকির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে পেট পরিস্কার হয়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের একটি পরিচিত বচন হলো- হরিতকির এমনি গুণ-, চিবাইলে বাড়ে আগুন। হরীতকি যারা নিয়মিত খায়, তাদের লিভারে, পাকস্থলীতে, এমনকি পুরো পেটজুড়ে কখনও কোন সমস্যায় পড়তে দেখা যায়নি।
বিড়ি-সিগারেটের নেশা ছাড়তে একটা আস্ত হরীতকি পকেটে রেখে দিন। যখন, নেশা হবে – তখন এক টুকরো হরিতকি চিবিয়ে খান। দেখবেন ম্যাজিকের মতো নেশার বিরুদ্ধে কাজ করছে। এটা বমির উদ্বেগের জন্যও কাজ করে।
হরিতকি খাওয়ার নিয়ম
হরীতকি মুলত ত্রিফলা মিশ্রণের একটি অংশ। যা বহেরা ও আমলকি সহ একটি ফর্মুলা করা হয়। সে নিয়ম অবশ্য অন্য এক লেখায় বলে দিয়েছি। তারপরও কোন কারনে শুধু হরীতকি এককভাবে খেতে চাইলে, আস্তো অথবা গুড়া উভয় পদ্ধতিতেই খেতে পারবেন। রাতে ভিজিয়ে সকালে এবং সকালে ভিজিয়ে রাতে খাবেন।
হরীতকি কোথায় জন্মে
উৎপাদন এলাকা : চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। দেশের অন্যান্য স্থানেও বিচ্ছিন্নভাবে হরীতকী জন্মে।
হরিতকি কোথায় পাবেন ও দাম কত
হরিতকি সাধারণত ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ডাক্তার কবিরাজগনেরই বেশী প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে এর ব্যবহার বেশী। যেকোন বানিয়াতির দোকানে, ফুটপাতে বা হারবাল ষ্টোরে খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন।
আস্তো হরীতকি বিভিন্ন প্রজাতি অনুসারে ৭০-১৫০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজির দাম হতে পারে। তবে, পাউডার হলে জানতে হবে বিচি ছাড়া নাকি বিচিসহ। বিচিসহ কেজি প্রতি ১২০-২২০ আর বিচি ছাড়া ২৫০-৪০০ পর্যন্ত হতে পারে। হারবাল ষ্টোর থেকেও এগুলো কিনতে পারবেন। অনলাইনে অর্ডার করলে হোম ডেলিভারি পেয়ে যাবেন। লেখাটি আপনার কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন।
আরও পড়ুন- আমলকির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ