ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। ত্রিফলা মুলত তিনটি হার্বস এর মিশ্রনকে বলা হয়ে থাকে। যা হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আমৃত্যু মহামুল্যবান পথ্য হিসাবে গণ্য করে আসছে।
বর্তমান যুগেও এর জনপ্রিয়তা কমেনি। বরং রসায়নিক প্রক্রিয়াজাত রুচিবর্ধক ও এন্টি এসিডিটি ঔষধ খেয়ে যারা ব্যর্থ হয়েছেন। তারাই আজ বাধ্য হয়ে ত্রিফলার দিকে ঝুকছেন। কিন্তু ত্রিফলা তার ক্রিয়াকর্মে একটুও কার্পণ্য করেনি। তার হারিয়ে যাওয়া পথ্য সেবনকারীকে ঠিকই আকর্শিত করতে পেরেছে বীরদর্পে। গত কয়েক বছরের জরীপে দেখা গেছে যে, প্রতিবছর ১২% পুরুষ ও মহিলারা নতুনভাবে ত্রিফলাকে নিয়মিত পথ্য হিসাবে গ্রহন করতেছে।
ত্রিফলা কিভাবে তৈরী হয়
ত্রিফলার মুল উপাদান হলো- আমলকি, হরতকি ও বহেরার সংমিশ্রণ। আপনি চাইলে বানিয়াতির দোকান থেকে সমপরিমান বহেরা আমলকি ও হরতকি কিনে, ভাল করে পরিস্কার করে, শুকিয়ে নিতে পারেন। তারপর আস্তো অথবা গুড়া করে খেতে পারবেন। গুড়া করতে হলে, বিশেষ ব্লেন্ডারে বা আটাকলের দ্ধারা পেষাই করা যায়। তাতে পাউডার হয়ে যাবে। এগুলো ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ত্রিফলার উপকারিতা কি
ত্রিফলা বলতে আমলকি হলো- ভিটামিন সি এর চমৎকার একটি উৎস। প্রায় পুরোটাই ভিটামিন-সি এ ভরপুর। এছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিসমৃদ্ধ এই আমলকি মুখের রুচি ফিরিয়ে আনে। মানবদেহের রেচক প্রক্রিয়াকে ডেভেলপ করে। এনজাইমকে সুগঠিত করে হজমপ্রক্রিয়ায় জটিলতা থাকলে এগুলো সারিয়ে তুলে। বিশেষ করে লিভারের দূর্বলতা দূর করতে ব্যাপক ভুমিকা রাখে। আয়ুর্বেদিক ভাষায় আমলকিকে অমৃত ফল বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও আমলকির অনেক ধরনের ব্যাবহার রয়েছে।
আমলকি রোগ প্রতিরোধে অনন্য, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তঃক্রিয়ায় অতি মারাত্মক ভুমুকা রাখে। জন্ডিসসহ যেকোন অরুচিসংক্রান্ত জটিলতায় আমলকির অবদান অসামান্য। নিয়মিত আমলকি খেলে ত্বকের লাবন্যতা প্রকাশ পায়। অকাল বার্ধক্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ত্রিফলা ভেজানো পানি খেয়ে দিন শুরু করে, তাদের কখনও ক্লন্তিবোধ হয়না।
হরতকির উপকারিতা কি
আয়ুর্বেদীয় একটি প্রবাদ আছে- হরতকির এমনি গুণ, চিবাইলে বাড়ে আগুন। হরতকি নিয়ে অনেক গল্পও আছে, এগুলোর সত্যতা কি, তার প্রমানে যাওয়ার দরকার নাই। শুধু এটুকুই জেনে রাখা ভাল, হরতকি নাকি গাছে পাকেনা। লোকমান হেকিমের জীবনীতে এমন অনেক তাৎপর্যপূর্ণ কথা আছে যা, সময় পেলে পড়বেন। হরতকির উপকারের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি, হার্টবার্ণ, অরুচি, ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ, সহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসাবে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে। অজীর্ণে হরতকি খুব উপকারী।
ত্রিফলার সাথে বহেরার উপকারিতা কি
বহেরা হলো- ত্রুিফলার আরেকটি অংশ। যা বায়ুনাশক ও অজীর্ণে খুব উপকারী। বহেরার বীজ অর্থাৎ বহেরার বাদাম পুরুষের যৌনদূর্বলতায় কার্যকরী, এটি প্রোটিনের যোগান দেয়। বহেরার বীজ দিয়ে কিন্তু আরেকটা মহৌষধ তেরী করা যায়। সেটা অন্য কোনো লেখায় জানিয়ে দিবো। আজকে ত্রিফলার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম লিখে শেষ করবো। বহেরা স্কিনের লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বয়সের চাপ কমায়।
মোট কথা হলো- ত্রিফলা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক উপকারী একটি হারবাল পথ্য। আমাদের দৈনন্দিন খাবারের মতোই যদি প্রতিদিনের রুটিনে ৬-১০ গ্রাম ত্রিফলা রাখতে পারি। তাহলে হাজার নয়, লক্ষ টাকার ঔষধের খরচ থেকে বেঁচে যেতে পারবো।
ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম
ত্রিফলা যদি আস্তো হয়, তাহলে এগুলোকে প্রতিদিন যা লাগবে, অর্থাৎ ৩-৪ আমলকি, ১-২ টা বহেরা, ২-৩ টা হরতকিকে একটু তেতলে একগ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিবেন। তা যদি রাত্রে ভিজান, তাহলে সকালে খালি পেটে খাবেন, আবার এগুলোর মধ্যে পানি ঢেলে রেখে দিবেন। অতপর রাতে খেয়ে নিবেন। তারপর অবশিষ্ট যা থাকবে সব ফেলে দিবেন। আবার নতুন করে সেইম প্রক্রিয়ায় তৈরী করে খাবেন।
যদি মিক্স পাউডার হয়। তাহলে দীর্ঘ সময় না ভিজিয়েও খেতে পারবেন। ১-২ চামচ পাউডার ১ গ্লাস পানিতে গুলে সাথে সাথেই খেতে পারবেন। অথবা সামান্য সময় ভিজিয়েও খেতে পারবেন। এভাবে দিনে ২ বার খাবেন। আশাকরা যায় যদি খুব বেশী সমস্যা না থাকে, তাহলে চমৎকার একটা ফলাফল পাবেন। যার জলন্ত স্বাক্ষী আপনি নিজেই হতে পারবেন।
অবশেষে বলবো
সব হারবাল যেমন হারবাল নয়। তেমনি সব কমার্শিয়াল প্যাকেটকারীও সমান নাও হতে পারে। তাই আমার পরামর্শ থাকবে নিজের হাতে বানিয়ে খেলেই ভাল ফলাফল পাবেন ইনশাআল্লাহ। আপনি চাইলে পুষ্টিগুন কতৃক ঘরোয়াভাবে তৈরিকৃত ত্রিফলা ট্রাই করে দেখতে পারেন। আমরা সবসময় আপোষহীন মাননিয়ন্ত্রনের চেষ্টায় সবসময় অবিচল। কোন অভিযোগ থাকলে কমেন্টে জানাবেন। আমরাও উপকৃত হবো
আরও পড়ুন– লেবুর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম