কালজিরা ও কালোজিরার তেলের উপকারিতা

কালোজিরা ও কালোজিরার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানার কথা। তবুও বিজ্ঞান সম্মত যেসব তথ্য পাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

কলোজিরার পরিচয়

কালোজিরা হলো নরম ও ছোট বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। আদি জন্মস্থান ইউরোপে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানান অঞ্চলে এর চাষাবাদ হয়। কারন, চিকিৎসা গবেষণায় এর উপকারিতা সম্পর্কে এখন সবাই এর ব্যাবহার বাড়িয়েছে। তাই চাষাবাদও বেড়েছে। বলা যায় বাংলাদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা আছে।

কালোজিরার গাছ উচ্চতায় ২৫-৩০ সেন্টিমিটারের মতো এই কালোজিরার রয়েছে বিভিন্ন নাম যথা- black cumin, Small fennel seed, Nigella, Roman coriandar, Holly Seed, Kolanji, black Caraway, এছাড়াও কালোজিরার ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিও আছে, এরমধ্যে ২০ টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। সবগুলো প্রজাতির বীজ একই রংয়ের অর্থাৎ কালো রঙের হয়ে থাকে।

কালোজিরার ঔষধি উপাদন সমূহ

কালোজিরা গাছের বীজ ও বীজের তেল ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কালজিরার বীজে তেল, ফ্যাটি এসিড, আমিষ ও এক ধরনের এসেন্সিয়াল অয়েল পাওয়া যায়। এই এসেনশিয়াল অয়েলের একটি এক্টিভেট উপাদান হলো- লাইজেলন এবং কারভোন ও করভেন নামক ২ টি টারপিন। এছাড়াও এতে গ্লাইকোসাইডল স্যাপোনিন, ম্যালানথিন, হেডোরাজেনিন (উপজাতক) ও স্যাপোজেনিন, মেলানথেজেনিন পাওয়া যায়। যা মানবদেহের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।

কালজিরা কি কাজ করে

মানবদেহে কালজিরার কাজ সাধারণত উদ্দিপনা তৈরি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, কফ-কাশি, বায়ুনাশক, রেচন প্রক্রিয়ায় উন্নতি, ক্রিমিনাশক, মু্ত্রকারক, রজঃস্রাব বর্ধক ও দুগ্ধবর্ধক হিসাবে কালজিরা একটি হারবাল ভেষজ। তাছাড়াও ইসলাম ধর্মে পবিত্র হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী কলোজিরা মৃত্যু ব্যতিত সর্বরোগের মহৌষধ।

কালজিরার উপকারিতা সমূহ

কালোজিরার উপকারিতা অনেক, তন্মধ্যে কয়েকটা উপাকারীতা সম্পর্কে লিখছি-
সর্দি লেগে মাথায় যন্ত্রনা করলে, একটি লিলেনের কাপড়ে পুটলি করে রোদে শুকাতে হবে, তারপর এই পুটলি নাকের কাছে নিয়ে শুকলে মাথা যন্ত্রনা কমে যাবে, এবং সর্দি তরল হবে।

নাক বন্ধ থাকলে, এরকম পুটলি করে কয়েকঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন, এবং বন্ধ নাকে পুটলি চেপে ফোটায় ফোটা করে দিবেন। নাক ক্লিয়ার হয়ে যাবে। এটি নবীজির দেয়া নিয়ম। হাদীস থেকে এমনই পাওয়া গেছে।

গলা ফোলে গেলে বা বিছার কামড়ে কালোজিরা বাটা লাগালে উপকার হয়। ইউনানি চিকিৎসায় প্রচন্ড জ্বরে, বা স্তনদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা বাটা খেতে নির্দেশ করেন। কালোজিরা শুধু মানবদেহেই নয়, গাভিকেও দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্যও খাওয়ানো হতো। মসলা হিসাবেতো বেশ জনপ্রিয়তা আছে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে।

কালোজিরার তেল বা নাইজেলা অয়েল

বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয় না হলেও বিশ্বের অনেক দেশে নাইজেলা অয়েল বা কালোজিরার তেল বেশ চাহিদাসম্পন্ন। সর্দি-কাশিতে চা বা গরম পানির সাথে, অথবা শুধু তেল কয়েক ফোটা করে দিনে কয়েকবার খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও একজিমা, বদহজম, বাত, ব্রঙ্কাইটিস, পেট-ব্যথা, বমি,কাটা-ছেঁড়া, দুগ্ধস্বল্পতা, ইতয়াদি সমস্যায় রয়েছে নাইজেলা অয়েলের ব্যবহার।

কালোজিরার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি

কালোজিরার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি। তবে গর্ভবতী মা যদি অতিরিক্ত পরিমানে কালজিরা বা তার তেল সেবন করে থাকেন, তবে গর্ভপাত হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীরা অল্প অল্প করে খেতে পারেন, তাতে কোন সমস্যা হবেনা।

বাজারে প্রচলিত কালোজিরার তেল

বাজারে প্রচলিত অনেক ধরনের কালজিরা তেল পাওয়া যায়। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই তেল দিয়ে সফট জিলেটিন ক্যাপসুলও বাজারজাত করেছে। তবে আমি সাজেশন করি, খাটি কালোজিরার তেল একটি চামচে আধা চামচ করে নিয়ে দিনে ২ বার পর্যন্ত খেতে পারেন।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

যেকোন খাবারের সাথে মিশিয়ে কালোজিরা খাওয়া যায়। পরোটা, পিটা, ভর্তা, ভাজি ইত্যাদি খাদ্যে মিশাতে পারেন। বিশেষ করে তরকারীতে মেশালে খাবারেও একটা টেষ্ট আসে। তবে, একটা ভর্তা রেসিপি আছে এটা ট্রাই করে দেখতে পারেন, খেতে খুব টেষ্টি।

পুরুষদের জন্য কালোজিরার উপকারিতা

পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য কালজিরা একটি আদর্শ টনিক। কয়েকঘন্টা ভিজিয়ে রাখা জিরাপানিতে কয়েকটা কালোজিরা ছিটিয়ে কয়েকদিন খেলে, যৌনবাহিত সমস্যায় উপকার হয়। তবে তারসাথে পঞ্চভুত খেলে দিগুন উপকার পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন – Alcet tablet এর কাজ কি

Leave a Comment