সিয়া সিড এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা চিয়াসিড এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে আজকের লেখাটা সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে করার চেষ্টা করবেন। 

আমাদের আজকের আলোচনা থেকে যা যা জানতে পারবেনঃ
  
চিয়াসিড এর উপকারিতা
চিয়া সিড কি
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুন
চিয়া সিড কেন খায়
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে চিয়া সিড এর ভুমিকা
চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়

চিয়াসিড এর উপকারিতা
চিয়া বীজ কর্মক্ষমতা এবং শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে, আমাদের শরীরের জন্য। এটা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলে। চিয়া বীজ আমাদের শরীরের ওজন কমিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটা ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। 

চিয়া সিড কি (What is chia seeds)

চিয়া সিড কিংবা চিয়া বীজ হচ্ছে মরুভূমির ভিতরে জন্মানো একটি সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia Hispanica) উদ্ভিদের বীজ। আর এই অতি উপকারি বীজটির আদি জন্মস্থান হচ্ছে মূলত সেন্ট্রাল আমেরিকা ও সেখানকার প্রাচীন আদিবাসি অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকের মধ্যে এই বীজ অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রমাণ অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছে। প্রাচীন মায়া আর অ্যাজটেক জাতির মানুষ চিয়া সিডকে সোনার থেকে ও কিন্তু মূল্যবাণ কিছু মনে করেছিল। কারণ তারা বিশ্বাস করত এটার মাধ্যমে তাদের শরীরে শক্তি এবং সাহস যোগাবে।
 
চিয়া সীড সকল ধরনের আবহাওয়ায় হয়ে থাকে এবং এর মধ্যে পোকামাকড়ের আক্রমণ খুব বেশি একটা হয় না। চিয়া বীজ সাদা আর কালো রং এর এবং তিলের মত ছোট সাইজের হয়ে থাকে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ যে, চিয়া সীড ও তোকমা নিয়ে ১টি ভুল ধারনা আমাদের মধ্যে রয়েছে। অনেকেই আছে যারা তোকমাকে ভুল করে চিয়া সীড মনে করে খেতে থাকেন। চিয়া সীড তোকমার থেকে ও সাইজে অনেক ছোট, তোকমার ইংরেজি নাম হচ্ছে ব্যাসিল সীড (Basil seed)।

চিয়া সিড এর পুষ্টিগুন

চিয়া সিড হচ্ছে একটি পুষ্টিকর খাবার। আর এর ভিতরে রয়েছে দুধের থেকে ও ৫ গুণ বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম, কমলার থেকে ও ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়েও ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার থেকে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিমের থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়েও ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩। পুষ্টি করে খাবারটি আপনারা সপ্তাহের ৭ দিনের মধ্যে যে কোন দিন খেতে পারেন চাইলে, কোন সমস্যা নেই। 

ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (United States Department of Agriculture) কিংবা ইউএসডিএ (USDA) এর ন্যাশনাল নিউট্রিয়েন্ট ডাটাবেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রত্যেক ৩.৫ আউন্স (১০০ গ্রাম) চিয়া সিডের ভিতরে আছে – 

৪৮৬ ক্যালোরি
৬% পানি
৪২.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
৩৪.৪ গ্রাম ফাইবার /  খাদ্যআঁশ
১৬.৫ গ্রাম প্রোটিন
০ গ্রাম চিনি
০% গ্লুটেন
৩০.৭ গ্রাম ফ্যাট

উল্লেখ্য যে, চিয়া সিডের ভিতরে এই ৩০.৭ গ্রাম ফ্যাটের মাঝে রয়েছে
 
স্যাচুরেটেড: ৩.৩৩ গ্রাম
মনোস্যাচুরেটেড: ২.৩১ গ্রাম
পলিঅনস্যাচুরেটেড: ২৩.৬৭ গ্রাম
ওমেগা -3: ১৭.৮৩ গ্রাম
ওমেগা -6: ৫.৮৪ গ্রাম
ট্রান্স: ০.১৪ গ্রাম

আর তাছাড়া ও চিয়া সিড আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন রকমের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপদানের যে চাহিদা গুলো রয়েছে সেই সকল পুষ্টি চাহিদাকে পূরণ করতে সক্ষম হলে ও এর মধ্যে থাকা ফলেট, ভিটামিন এ ও  কপারের আধিক্য প্রায় নেই  বলা যায়।

তবে এটার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি-১ এর উৎস হিসাবে থায়ামিন (thiamine) আছে যেটা দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা এর প্রায় ১৫ শতাংশ, এবং ভিটামিন বি-৩ এর উৎস হিসাবে নায়াসিন (niacin) আছে প্রায় ১৬ শতাংশ এর মত।

চিয়া সিড কেন খায়

প্রত্যেক দিন যদি আপনারা নিয়ম করে দুই চা চামচ চিয়া সিড  খান তবে আপনাদের শরীরে অনেক শক্তি আসবে এবং আপনার শরীরে কর্মক্ষমতা আগের থেকে অনেক গুনে বাড়িয়ে তুলবে। আর এটার মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট  থাকার কারণে চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আর ও বেশি পরিমাণে শক্তিশালী করে তুলে।

মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে এটা ওজন কমানোর জন্য সহায়তা করে থাকে। এটা আমাদের রক্তের মধ্যে চিনির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে যার কারণে আমাদের শরীরে ডায়বেটিসের ঝুঁকি  অনেক কমে যায়।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম / চিয়া সিড খাওয়ার জন্য অনেক নিয়ম রয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতেই আপনারা চাইলে চিয়া সিড খেতে পারবেন, যেমন মনে করুন – 

স্মুথি বানিয়ে খেতে পারেন 
সালাদ হিসাবে আবার আপনি চাইলে 
ড্রিংকস বানিয়ে ও খেতে পারেন 

চিয়া সিডকে আলাদাভাবে রান্না করে খাওয়ার কোন দরকার হয় না, বরং আপনি চাইলে এটাকে নির্দিষ্ট কিছু খাবারের সঙ্গে যেমন (ওটস, পুডিং, জুস, স্মুদি ইত্যাদি যে সমস্ত খাবারগুলো রয়েছে) সেগুলো সঙ্গে মিশিয়ে খুব সহজে খেতে পারবেন। আর তাছাড়া আপনি যদি চান তবে টকদই, সিরিয়াল, রান্না করা সবজি কিংবা সালাদের ওপরে ছড়িয়ে ও তারপরে সেটাকে খেতে পারেন।  

স্বাস্থ্য সচেতন যারা আছে তাদের জন্য চিয়া সিডের পুডিংয়ের রেসিপি নিচে দেয়া হলোঃ

উপকরণসমূহ হলঃ 

চিয়া সিড – ১ আউন্স (২৮ গ্রাম কিংবা ২ টেবিল চামচ পরিমানে দিবেন)
তরল দুধ দিতে হবে – হাফ কাপ (১১৮ মিলি এর মত)
ম্যাপল সিরাপ/মধু (অপশনাল) – ১ টেবিল চামচ পরিমানে দিলেই হবে। 

প্রস্তুত প্রণালী

১টি বোলে চিয়া সিড আর তরল দুধ ভালো ভাবে করে মিশিয়ে নেওয়া লাগবে। আর তারপরে সবার শেষে বাড়তি যে ফ্লেভার আছে তার জন্য মধু অথবা ম্যাপল সিরাপ যোগ করে দিতে পারেন। 
আর এরপরে আপনাকে মিশ্রণটিকে ১টি জারে নিয়ে সারা রাত রেফ্রিজারেটরের ভিতরে রেখে দেওয়া লাগবে। সময় যদি কম থাকে আপনার কাছে তাহলে কয়েক ঘন্টা রেখে দিলে ও হবে কোন সমস্যা নেই। 
খাবার আগে আপনারা আপনাদের নিজেদের পছন্দ মতো যেকোনো তাজা ফলের টুকরো কিংবা বাদাম কুচি ছড়িয়ে নিতে পারেন। 
আপনাদের ভিতরে যারা চিয়া পুডিংয়ে স্বাদের ভিন্নতা করতে চান, তারা অবশ্য ইচ্ছা করলে নারকেল কুচি, পিনাট বাটার  কিংবা কোকো পাউডার ও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

ওজন কমাতে চিয়া সিড এর ভুমিকা

চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং খাদ্যআঁশ যেটা আমাদের শরীরে ক্ষুধা কমানোর জন্য সাহায্য করে। প্রোটিন এবং খাদ্যআঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রেখে দেয় যার ফলে বারবার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। প্রতি আউন্স চিয়া সিডে ৯.৭৫ গ্রাম খাদ্যআঁশ এবং ৪.৬৯ গ্রাম প্রোটিন আছে। মূলত সেখানে খাদ্যশক্তি আছে ১৩৮ ক্যালরি এর মত।

চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়? 

চিয়া সিড কিংবা চিয়া বীজ মরুভূমির মধ্যে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia Hispanica) উদ্ভিদের বীজ। আর এই অতি উপকারী বীজটির আদি জন্মস্থান হচ্ছে সেন্ট্রাল আমেরিকা ও সেখানকার প্রাচীন আদিবাসি অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকার মধ্যে এই বীজ অন্তর্ভুক্ত থাকার অনেক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

চিয়া সীড বা বীজের দাম

প্রত্যেক কেজি চিয়া সিডের দাম ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি অল্প পরিমাণে কিনতে চান, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে প্রত্যেক ১০০ গ্রাম চিয়া সিড এর দাম পড়বে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। 

চিয়া সিড বর্তমানে এখনো লোকাল মার্কেটের সেরকম ভাবে খুব বেশি পাওয়া যায় না। তবে ভালো মানের যে সমস্ত অর্গানিক শপ আর অনলাইন মার্কেটগুলো আছে সেখান থেকে আপনি চিয়া সিড অর্ডার করে খুব সহজেই আপনার বাসায় নিয়ে আসতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা

তাহলে আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা চিয়াসিড এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সমস্ত তথ্য জানতে পারলেন। আর আপনারা যদি রকমের বিভিন্ন তথ্য প্রতিদিন পেতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করুন।

আমাদের ওয়েবসাইটের মধ্যে এই রকমের বিষয় নিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন আলোচনা করা হয়ে থাকে, সেগুলো সবার আগে পেতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকবেন। আজকে এই পর্যন্তই, পরে আবার অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

আরো পড়ুন – মেথির উপকারীতা কি

Leave a Comment