গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ খাওয়া যাবে এবং কোনটা খাওয়া যাবেনা

প্রেগ্ন্যান্সি ক্যাটাগরি কি, গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ খেতে পারবেন আর কোনটি খেতে পারবেননা। গর্ভবতী মহিলাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো গর্ভকালীন সময়, এসময়টা খুব সতর্কতার সাথে কাটাতে হয়। গর্ভের অনাগত সন্তান সুস্থভাবে জন্ম দেয়ার জন্য যেকোন ধরনের ত্যাগ শিকার করতে বাধ্য হন। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনেকের জানতে ইচ্ছে হয়, তাই আজকের লেখাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কারন, একটি ভুলের জন্য তার অনাগত সন্তানের ক্ষতি হউক সেটা কেউই চায়না। অনেক সময় ঘরে থাকা অবশিষ্ট কিছু ওটিসি ঔষধ প্রয়োজন হলে কাউকে না জিজ্ঞেস করেই খেয়ে নেন। ভুলটা হয়ত তখনই হয়। তাই সবারই জেনে রাখা দরকার, গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ খেতে পারবেন আর কোনটি খেতে পারবেননা।

প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরী কি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী যেসব ঔষধকে গর্ভাবস্থায় খেতে নিষেধ করা হয়েছে, এবং যেসব ঔষধকে খাওয়ার উপযুক্ত করে দেয়া হয়েছে তাকে, শ্রেণীভুক্ত করার নামই প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরী। যা অনুসরণ করলে গর্ভের সন্তান বা ভ্রূণের কোন ক্ষতির আশংকা থাকেনা বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিয়ে থাকে।

প্রেগন্যান্সিতে কোন ক্যাটাগরীতে কি বুঝায়

প্রেগন্যান্সি ক্যটাগরী বলতে এ, বি, সি ও ডি মোট ৪ টি ক্যাটাগরীতে বিভক্ত। অর্থাৎ প্রেগ্ন্যাসি ক্যাটাগরী এ হলো- নিসন্দেহে এই ঔষধ খাওয়া যাবে, এতে সামান্যতম ভ্রুণের কোন ঝুঁকি থাকবেনা।

প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরী বি – এই ক্যাটাগরীর ঔষধও নিরাপদ, তবে ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম তিন মাস যদি তেমন কোন প্রয়োজন না হয়, তাহলে এড়িয়ে চলাই উত্তম। তবে ভ্রুণের ঝুকি নাই বললেই চলে। পরবর্তীতে এড়িয়ে চলার কোন প্রয়োজন নাই, ৪র্থ মাস থেকে সম্পুর্ন নিরাপদ।

প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরী সি – এই ক্যাটাগরীর ঔষধ প্রথম তিন মাস খুব ঝুকিপূর্ণ, অর্থাৎ ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে, তাই প্রেগন্যান্সির ফার্স্ট স্টেজে খাওয়া যাবেনা। খুব বেশী প্রয়োজন হলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ৬ মাস পর থেকে খাওয়ানো যাবে মনে হলে, খাওয়া যাবে। অন্যতায় খাওয়া যাবেনা।

প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরী ডি– গর্ভাবস্থায় এই ক্যাটাগরীর ঔষধ কখনোই খাওয়া যাবেনা। ভ্রুণ বা অনাগত সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। তাই এগুলোর ক্ষেত্রে বিকল্প কোন ঔষধ বেচে নিতে হবে। যেমন তীব্র ব্যথার ঔষধগুলো, পেনিসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক, প্রেসারের ঔষধ, ঘুমের ঔষধ, সাইকোটিক ঔষধ ইত্যাদি

আবার কিছু ঔষধ আছে, যেগুলোতে লেখা থাকতে পারে নন ক্লাসিফাইড। এগুলো সাধারণত এখনো কোন পরীক্ষা নীরিক্ষা চালানো হয়নি, বা সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য এখনো আসেনি। তাই গর্ভাবস্থায় এই জাতীয় ঔষধগুলো কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া খাওয়া উচিত হবেনা।

গর্ভাবস্থায় যেসব ঔষধ খাওয়া যাবে

জ্বর বা ব্যথা হলে, শুধু মাত্র প্যারাসিটামল ৫০০ মিগ্রা টেবলেট ১ টা করে ৩-৪ বার খেতে পারবেন, তবে এক্সট্রা বা প্লাস যুক্ত করা (প্যারাসিটামল+ক্যাফেইন) খাওয়া যাবেনা।

আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, মিনারেলস, জিঙ্ক, ফলিক এসিড, স্যালাইন, এগুলো অবশ্যই খাওয়া যাবে এবং খেতে হবে। এতে গর্ভবতী নারী এবং সন্তানের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যাবে। অনাগত শিশুর জন্মটা সুস্থতার সাথে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায় যেসব ঔষধ খাওয়া যাবেনা

যেকোন ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ব্যতিত অন্য কোন ঔষধ খাওয়া যাবেনা। তবে পেটের ব্যথার জন্য টাইমোনিয়াম মিথাইল সালফেট অর্থাৎ এলজিন বা ভিসেট জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে। এখানে NSAID এর অন্যান্য ঔষধ কোনটাই খাওয়া যাবেনা। এগুলো খেলে অনাগত সন্তানের অঙ্গহানীসহ মারাত্মক ক্ষতির আশংকা থাকে।

আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্য বীমা কি | স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজন কি | কোথায় করবেন?

ব্যথার ঔষধের মধ্যে কেটোরোলাক, ইটোরীকক্সিব, ডাইক্লোফেনাক, এসিক্লোফেনাক, আইবোপ্রুফেন, নাপা এক্সট্রা জাতীয় প্যারাসিটামল ইত্যাদি।

ঘরে থাকা অন্যান্য ঔষধের মধ্যে এগুলোই সচরাচর থাকে, তাই এগুলো সম্পর্কে স্পেশাললি সতর্ক করা হলো। এছড়াও- আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন, অনেক ধরনের মলম, ক্রিম ও স্টেরয়েড ধরনের ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবন করা যাবেনা। এসব ঔষধ সেবনে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায় বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। এবং গর্ভে থাকা ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতির আশংকা আছে বলে চিকিৎসকদের সবারই দাবি। তাই গর্ভাবস্থায় এসব ঔষধ খাবেননা।

গর্ভাবস্থায় হাই প্রেসারের ঔষধ কি

যাদের হাই প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ আছে তারা গর্ভ ধারনের পর থেকে আগের ঔষধ বন্ধ রেখে, গর্ভাবস্থায় প্রেসারের জন্য মিথাইলডোপা গ্রপের ঔষধ খেতে হবে। এবং তা হতে হবে অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।

সর্দি কাশি এলার্জিতে গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ খাওয়া যাবে

গর্ভাবস্থায় সর্দি কাশি ও এলার্জি একটি কমন সমস্যা, তাই এগুলো নিয়ে অনেকেই দ্বিধা দন্দে থাকেন, এবং কেউ কেউ মারাত্মক ভুল করে ফেলেন। গর্ভাবস্থায় এই সমস্যাগুলো দেখা দিলে, শুধুমাত্র রুপাটাডিন অথবা ইবাহিষ্টিন গ্রুপের যেকোন ঔষধ দিনে একবার খেতে পারেন। সাথে মন্টিলুকাস্ট ১০ মিগ্রা খেতে পারবেন। তবে এসবের জন্য অন্যান্য ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হলে, অবশ্যই ডাক্তারকে প্রেগন্যান্সির কথা জানাবেন।

গর্ভাবস্থায় ডায়রিয়া বা আমাশয় হলে কোন ঔষধ খাওয়া যাবে

গর্ভাবস্থায় ডায়রিয়া বা আমাশয় হলে অনেকেই আরেকটা ভুল করেন। মেট্রোনিডাজল টেবলেট খান, কিন্তু এটা খাবেননা। এখানে প্রচুর স্যালাইন খেতে পারেন, এবং প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিটাজক্সানাইড ট্যাবলেট দিনে দুবার খেতে পারবেন। সাথে এজিথ্রোমাইসিন দিনে একবার ৩-৫ দিন খাওয়া যাবে।

গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ খাওয়া যাবে এবং কোনটা খাওয়া যাবেনা তার একটা মোটামুটি ধারনা পেয়ে গেলেন। সাধারণত যেসকল কমন সমস্যাগুলো হয় তাও জানতে পারলেন। সেই সাথে যেসব ঔষধ ঘরে থাকে, সেগুলো সম্পর্কেও মোটামুটি বলা হয়েছে। তারপরও যদি কোন বিষয়ে জানার থাকে, তাহলে কমেন্টে বলবেন। ওয়াটসএপে এসব সেবা দেয়া হয়না। ধন্যবাদ পুষ্টিগুনের পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুন – ভরা পেটে সহবাস করলে কি হয়

2 thoughts on “গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ খাওয়া যাবে এবং কোনটা খাওয়া যাবেনা”

  1. আমার স্ত্রী, বয়স ৩২, তৃতীয় সন্তান কনসিভ করেছেন,আগের দুটো সিজার,গর্ভধারণের আগ থেকেই তিনি উচ্চ রক্তচাপের জন্য অলমিসান ২০ প্রতিদিন একটা করে খেতেন…প্রেগন্যান্সির পর গাইনিকোলজিষ্ট দেখিয়েছি উনি প্রচুর টেষ্ট করিয়েছেন…সিস্টোলিক ১৫০/১০০ পেয়েছেন এবং উনার প্রায় ই ১৬০/১১০ সিস্টোলিক হয়…ডায়বেটিস দরজায় কড়া নাড়ছে, ৫০০ গ্রাম কমেট রাতে খাচ্ছেন একটা, সাথে সারডোপা ৫০০ তিন বেলা খাচ্ছেন… কিন্তু বিষয় হলো উচ্চ রক্তচাপ কোন মতেই নিয়ন্ত্রণে আসতেছে না…ওজন বাচ্চা ছাড়া ৯০+ – হবে…ঘুম মুটামুটি হয়,খাবার দাবার ও ঠিক হচ্ছে….এখন উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণের জন্য কি করা???প্লিজ একটু পরামর্শ দিন🙏

    Reply
    • এখন থেকে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সারডোপা ট্যাবলেট খেতে হবে। সারডোপা ছাড়া আর কিছু খাওয়াবেন্না, প্রয়োজনে সবকিভহু ডাক্তারকে বলে নিন। তিনি ঔষধের পরিমান বাড়াতে চাইলে পারবান তাছাড়া হবেনা।

      Reply

Leave a Comment