মোটা হওয়ার ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম

মোটা হওয়ার ঔষধ বাজারে ঠিকমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। এর মধ্যে কোনটা ভাল আর কোন ক্ষতিকর তা বুঝা সাধারণ রোগী তো দূরে থাক, অনেক চিকিৎসকগণও বুঝতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আজকে কিছু টিপস দেয়ার উদ্দেশ্যে লিখতে বসলাম। আসুন জেনে নিই খাবারের রুচিসহ স্বাস্থ্যবান হওয়ার কিছু সিরাপ ও টেবলেটের নাম ও খাওয়ার নিয়ম। সেই সাথে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি সবকিছু বলার চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

খাবারে রুচি বৃদ্ধির ঔষধ

খাবারে রুচি বৃদ্ধির জন্যও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিরাপ ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল পাওয়া যায়, তবে বেশীরভাগ ঔষধই স্টেরয়েড মিশ্রিত। যেগুলো ইউনানি, আয়ুর্বেদিক বা হারবাল জাতীয় ঔষধ বলে খাওয়ানো হয়। এর মধ্যে কেয়ার ল্যাবরেটরীজ এর “কেয়ারটন” হার্বো কোম্পানির “আমরুধ” সহ অনেক কোম্পানি এসব ঔষধ বাজারজাত করে আসছে।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে হামদর্দ এর সিনকারা সাজেস্ট করি। কারন, এটা সব জায়গায় পাওয়া যায়, দামও তুলনামুলক কম। কাজও করে ভাল। এছাড়া শুধু মাত্র রুচি বৃদ্ধির জন্য গ্যাসের ঔষধের ভাল কোম্পানির ডমপেরিডন ১ মাস দিনে ২ বার খাবার আধাঘন্টা আগে সেবন করা যেতে পারে। এর সাথে রাত্রে ১ টা ফলিক এসিত ট্যাবলেট ও মাল্টিমিনারেল ট্যাবলেট খেতে পারেন ১ মাস। আরও ভাল হয়, যদি জিংক + ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট সকাল ও রাতে ১ টা করে ১ মাস খেতে পারলে, আশা করা যায় রুচির সমস্যাটা সমাধান হবে।

তারপরও যদি না হয়, তাহলে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টার্লজি বা জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারেন। তবুও গ্রামের সাধারণ চিকিৎসক না দেখানো ভাল। কারন, অনিয়ন্ত্রিত মাত্রার স্টেরয়েড ব্যবহৃত কোন ঔষধ যদি দীর্ঘদিন সেবন করায়, এতে আপনার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

ছেলেদের মোটা হওয়ার ঔষধ

ছেলেদের মোটা হওয়ার ঔষধ খাওয়ার আগে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা নির্নয় করা উচিৎ। তা হলো, ঐ ছেলের বয়স কত? এবং বয়সের সাথে তার যে পুরুষালী সমস্যাগুলো থাকার কথা সেগুলো আছে কিনা। বেশীরভাগ ছেলেদের এই সমস্যার কারনে শরীর রোগা রোগা দেখা যায়। তাই আগে এই সমস্যার সমাধান করা উচিৎ।

অন্যথায় মোটা হওয়ার ঔষধ কিছুদিন খাওয়ার পর মোটা হবে ঠিক, আবার সেই আগের মতোই কঙ্কালসার হয়ে যাবে। তাই দেখতে হবে, তার স্বপ্নদোষ মাসে কয়বার হয়, প্রশ্রাবের আগে বা পরে বীর্যের মতো কিছু নির্গত হয় কিনা। হলেও এর পরিমান আশংকাজনক কিনা। এগুলো কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করে ভাল একজন চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। সেই সাথে আগে এর সম্পুর্ন চিকিৎসা নিয়ে, তারপর মোটা হওয়ার ঔষধ খেতে পারেন।

মোটা হওয়ার ঔষধের নাম

ছেলেদের মোটা হওয়ার ঔষধের নাম একটু আলাদা করে বলতে হয়, কারন হরমোনের বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই ছেলেরা মোটা হওয়ার জন্য কারমিনা সিরাপ এবং সিনকারা একসাথে খাবেন। সুপ্রাভিট-এম একটা করে ২ বার খেতে পারেন ২ মাস। এর মধ্যে বাড়তি ১ টা ক্যালসিয়াম + ভিটামিন ডি যোগ করা যেতে পারে। তবে কেউ কেউ সিপ্রোহেপ্টাডিন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এটা নিষেধ করি। কারন এর মধ্যে বহু ক্ষতিকারক উপাদান থাকার আশংকা আছে। তাই এগুলোর সাথে পর্যাপ্ত আমিষ, প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার ও ফলমুল খেলে মোটা হয়ে যাওয়ার কথা।

মোটা হওয়ার ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

কারমিনা সিরাপ ৩ চামচ করে ৩ বার, সিনকারা সিরাপ ৪ চামচ করে ৩ বার, ক্যালসিয়াম-ডি প্রতিদিন ১টা, সুপ্রাভিট-এম ১টা করে ২বার এভাবে ২মাস ঔষধ খেয়ে যাবেন। ২ মাসে ৮-১০ কেজি ওজন বাড়বে এবং অনেকটা মোটা হতে পারবেন।

মেয়েদের মোটা হওয়ার ঔষধের নাম

মেয়েদের মোটা হওয়ার জন্য এনারিষ্ট থ্রিজি, আমলকি প্লাস, আম্রুদ প্লাস সিরাপ অথবা হেলফিট রুচিভিট ট্যাবলেট খেতে পারেন। তবে অবশ্যই অতিমাত্রায় খাবেননা।

মোটা হওয়ার এপিটাইজ সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

মোটা হওয়ার এপিটাইজ সিরাপ হলো- এলোপ্যাথিক মেজেষ্ট্রল এসিট্যাট, যার ব্র্যান্ড নাম এপিট, এপিটাইজ, ম্যাগানর, মেগানক্স ইত্যাদি নামে ফার্ম্মেসীতে পাওয়া যায়। রাত্রে ১-২ চামচ করে খেতে হয়। তবে, ছেলেরা এই সিরাপ বা ট্যাবলেট অতিরিক্ত খেলে মেয়েলি স্বভাব ধারন করতে পারে। তাই ছেলেরা এই ঔষধ না খাওয়াই ভাল।

মোটা হওয়ার হারবাল ঔষধের নাম

মোটা হওয়ার হারবাল ঔষধ বলতে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি কোম্পানির ঔষধগুলোকে বুজায়। যা আম্লাডেক্স, রুচিট্যাব, আমলকি প্লাস, এনারিস্ট থ্রিজি, অল্ভিটন, পিউভিট, রুচিভিট, হেলফিট ইত্যাদি।

মোটা হওয়ার হোমিও ঔষধের নাম

মোটা হওয়ার হোমিও ঔষধের মধ্যে সর্বপ্রথম Alfalfa আলফালফা ও পরবর্তিতে অন্য ঔষধের নাম পরে আসতে পারে। হোমিও ঔষধ আলফালফা মাদার টিংচার ৫-১০ ফোটা করে দিনে ৩ বার ২ মাস খেলে আগের চেয়ে অনেক মোটা হওয়া যায়।

মেয়েদের মোটা হওয়ার ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

আমলকি প্লাস বা অন্যান্য সিরাপগুলো ১ম মাসে ২ চামচ করে ৩বার, পরবর্তি মাসে ২ চামচ করে ২ বার এবং ট্যবলেট ১ম মাসে ১টা করে ৩বার, ২য় মাসে ১টা করে ২বার, সাথে গ্যাষ্ট্রিকের ঔষধ সহ খেতে হবে।

মোটা হওয়ার ঔষধ নিজে তৈরী করবেন কিভাবে

মেয়ে-ছেলে সবার জন্য মোটা হওয়ার আরেকটি ঔষধ হলো, মুশুর ডালের সিরাপ। আধাকেজি মুশুরডাল একটি সুতি কাপড়ে পুটলি বেধে, ৩ কেজি পানিতে জ্বালে বসিয়ে, তাতে মৌরী, যয়ত্রী, জায়ফল, ধনিয়া, এলাচ সমপরিমান মেশাতে হবে। ১ কেজি থাকতে নামিয়ে ঠান্ডা হলে এর মধ্যে সোডিয়াম বেঞ্জুয়িক মিশিয়ে কাচের বোতলে সংরক্ষণ করে, দৈনিক ৩ বারে ১২০ মিলি করে খেলে, অল্প দিনেই মোটা হওয়া যায়।

মোটা হওয়ার ঔষধের সাইড এফেক্ট

মোটা হওয়ার ঔষধের মারাত্মক কিছু সাইড এফেক্ট আছে। এগুলো জেনে রাখা ভাল। কারন, আপনি না জেনে এগুলো খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, প্রচারকেই দোষারুপ করবেন। হয়ত বলবেন এসব ঔষধ সম্পর্কে যদি সম্পুর্নরুপে কেউ বলে দিতো, তাহলে হয়ত এর বিকল্প কিছু খোঁজতাম। এসব ঔষধের সাইড এফেক্টগুলো হচ্ছে, স্টেরয়েডের প্রভাব শরীরে ছড়িয়ে পরতে পারে। যার কারনে, শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা, হাড়ক্ষয়, লিভারে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়া, এমনকি কিডনিতেও প্রভাব পরতে পারে।

তাই যত সম্ভব, এই স্টেরয়েডের বিকল্প কিছু খেতে হবে। অর্থাৎ ঔষধ নয়, পথ্য দিয়ে একটু বেশী খরচ এবং বেশী সময় নিলেও আমার মতে এটা ভাল। যেমন, প্রতিদিন কয়েকটা খেজুর, সামান্য আখরোট, কয়েকটা মিশ্র বাদাম, ১ গ্লাস দুধ, ১ টা ডিম, তৈল জাতীয় বীজ – যেমন তিল বা তিশি ভাজা। মাছ বা মাংস রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাবারে। ইনশাআল্লাহ সময় একটু বেশী নিলেও শরীরটা একটু পরিবর্তন আসবে। আপনি চাইলে মিক্সড ফ্রুট কিনে নিতে পারেন। অথবা মধুমাখা বাদাম পাওয়া যায়। এগুলো ট্রাই করেন ২-৩ মাস, দেখবেন আকর্ষণীয় একটা বডি বিল্ট হয়ে গেছে।

পরামর্শটা কেমন হলো আশাকরি জানাবেন। পুষ্টিগুন সবসময় চেষ্টা করে, তার সুপ্রিয় পাঠক পাঠিকাগনকে সুন্দর ও কল্যানকর পরামর্শ দিতে। কারন এটাও একটা সামাজিক সেবামুলক কাজ হিসাবে আমি মনে করি। পুষ্টিগুন সাইট সম্পর্কে আপনার বন্ধুকে অভহিত করতে লিংক কপি করে শেয়ার করতে পারেন। তবে কপি করা দন্ডনীয়।

আরও পড়ুনদ্রুত বীর্য পাতের ঔষধ কি

Leave a Comment