উকুন থেকে মুক্তির উপায় লিকনিল বা এলাইচ ব্যবহারের নিয়ম

উকুন থেকে মুক্তির উপায় কি? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক পুরুষ ও মহিলারা জানতে চেয়েছেন। মাথায় উকুন হয়না এমন লোক খুবই কম। কিন্তু সবার মাথায় উকুন বেশীদিন থাকেনা। আবার অনেকের মাথা থেকে উকুন পরিস্কারও হতে চায়না। আজকে উকুনের লোশন এলাইচ বা লিকনিল সম্পর্কে জানাবো।

উকুন তাড়ানোর জন্য অনেক কিছুই ব্যবহার করেছেন। যেমন- উকুন নাশক সাবান, স্যাম্পু, লোশন ইত্যাদি। তবুও কিছুতেই কাজ হয়নি! তাই আজকে একটি ঔষধ সম্পর্কে জানিয়ে দিবো, যে লোশন ১ বার ব্যবহার করলেই মাথা থেকে সমস্ত উকুন পরিস্কার হয়ে যাবে। এই লোশন ৬ মাস বয়স থেকে সব বয়সীরাই ব্যবহার করতে পারবে।

উকুনের লোশন কি

ইভারমেকটিন হলো এভারমেকটিন শ্রেণীর একটি সদস্য। অমেরুদন্ডী প্রাণীর স্নায়ু ও পেশী কোষে প্রধানত গ্লুটামেট-গেটেড ক্লোরাইড চ্যানেলের সাথে সুনির্দিষ্ট এবং উচ্চ সম্পৃক্ততার সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এটা পরজীবিদের মৃত্যু ঘটায়।

কোষ পর্দার ভেদ্যতা বাড়িয়ে কোষের ভেতর ক্লোরাইড আয়নের ঘনত্ব বাড়ায়। ফলে মায়ু ও পেশী কোষের হাইপার পোলারাইজেশন ঘটে এবং পরজীবির অসারতা ও মৃত্যু ঘটে। এই শ্রেণীর যৌগ অন্যান্য লিগ্যান্ড গেটেড ক্লোরাইড চ্যানেল, যেমন নিউরোট্রান্সমিটার গামা-অ্যামিনোবিউটাইরিক এসিড (পাবা) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ক্লোরাইড চ্যানেলের সাথেও ক্রিয়া করে।

এভারমেকটিন গুলো স্তন্যপায়ীদের লিগ্যান্ড গেটেড ক্লোরাইড চ্যানেলের প্রতি স্বল্প প্রবণতা প্রদর্শন করে এবং অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর গ্লুটামেট-গেটেড ক্লোরাইড চ্যানেল না থাকায় এভারমেকটিন যৌগ সমূহ শুধু পরজীবিদের ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করে। ইভারমেকটিন সহজে ব্লাড ব্রেইন ব্যারিয়ার অতিক্রম করে না।

লিকনিল বা এলাইচ লোশনের কাজ কি

এটি ৬ মাস বা তার বেশী বয়সী রোগীদের মাথায় উকুন সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য নির্দেশিত।

লিকনিল বা এলাইচ কেন কোথায় ব্যবহার করে

লিকনিল লোশন শুধুমাত্র মাথা ও মাথার চুলের ব্যবহারের জন্য। এটি মুখে, চোখে এবং যোনীতে ব্যবহারের জন্য নয়।

লিকনিল বা এলাইচ লোশন শুষ্ক চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে, যাতে চুল ও মাথার ত্বক সম্পূর্ণ আবৃত হয়। লোশনটি ১০ মিনিট মাথায় রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। টিউবটি শুধুমাত্র ১ বার ব্যবহারের জন্য। অব্যবহৃত অংশ ফেলে দিতে হবে। চোখের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

লিকনিল বা এলাইচ লোশন ব্যবহারে প্রতিনির্দেশনা

কোন ধরনের প্রতিনির্দেশনা নেই।

লিকনিল বা এলাইচ লোশন ব্যবহারের নির্দেশাবলী

লিকনিল বা এলাইচ লোশন ব্যবহারের পূর্বে ব্যবহারের নির্দেশাবলী পড়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। নির্দেশাবলী ভালোমত পড়ে, বুঝে ও অনুসরণ করে লিকনিল লোশনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

  • লিকনিল লোশন ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই মাথা ও মাথার চুল সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর এলাইচ বা লিকনিল লোশন সরাসরি মাথার শুকনো চুলে এবং মাথার তালুতে প্রয়োগ করতে হবে।

লিকনিল বা এলাইচ ব্যবহারে সতকর্তা

শিশুরা যাতে খেয়ে না ফেলে এজন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। দূর্ঘটনাবশত খেয়ে বিষক্রিয়া হলে সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে প্যারেন্টেরাল তরল ও ইলেক্ট্রোলাইট, শ্বসনের সহায়ক (প্রয়োজন হলে অক্সিজেন এবং যান্ত্রিক বাতাস চলাচল ব্যবস্থা) এবং যদি ক্লিনিক্যালি গুরুত্বপূর্ণ হাইপোটেনশন থাকে তাহলে প্রেশার উৎপাদন যোগ করতে হবে। গলধঃকরণ করা ওষুধের শোষণ রোধ করার জন্য জরুরী ভিত্তিতে বমি করতে হবে অথবা, গ্যাস্ট্রিক ল্যান্ডোজের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পরবর্তীতে বিরেচক এবং অন্যান্য বিষরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এলাইচ বা লিকনিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কনজাংটিভাইটিস, অকুলার হাইপারেমিয়া, চোখের জ্বালাপোড়া ভাব, খুশকি, শুষ্ক ত্বক, ত্বকের জ্বালাপোড়া ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে এলাইচ বা নিকনিলের ব্যবহার

প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরি সি। গর্ভবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে এই লোশন ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

উকুন এর বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শঃ

  • যাদের মাথায় জীবিত উকুন আছে তাদের মাথার সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • চিরুণী, ব্রাশ, টুপি, স্কার্ফ, ব্যান্ডেনা, রিবন, চুলের ব্যান্ড, তোয়ালে, হেলমেট এবং চুল সম্পর্কিত ব্যক্তিগত সামগ্রী অন্যের সাথে আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।

উকুনের চিকিৎসা শেষে এক সপ্তাহ পর পরিবারের সবাইকে পরীক্ষা করাতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লিকনিল বা এলাইচ ব্যবহারের নিয়ম

  • প্রথমে মাথার তালুর নিকটবর্তী চুল থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে চুলের আগা পর্যন্ত লিকনিল বা এলাইচ লোশন মেখে নিতে হবে।
  • চুলের সকল অংশে নিকনিল বা এলাইচ লোশনটি মালিশ করতে হবে।
  • লিকনিল অথবা এলাইচ লোশন দিয়ে ভালভাবে চুলকে আবৃত করতে হবে, যেন সমস্ত উকুন ও ডিম লিকনিল বা এলাইচ লোশন দ্বারা ভিজে যায়। প্রত্যেকটি চুলের গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত যাতে লিকনিল বা এলাইচ লোশন দিয়ে আবৃত থাকে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে নিকলিন বা এলাইচ লোশন ব্যবহার করতে হবে, যেন মাথা ও সমস্ত চুল ভেজা ভেজা হয় ।
  • এলাইচ বা লিকনিন লোশন ব্যবহারের পর ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
    এরপর পানি দিয়ে সম্পূর্ণরূপে মাথা ও চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • নিকনিল বা এলাইচ লোশন ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
    আরও পড়ুন – জণ্ডিসের ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম

উকুন দূর করার আরেকটি ঔষধ

উকুন দূর করার আরেকটি ঔষধ হলো- পারমিন ক্রীম। যদিও এটা খোসপাঁচড়ার ঔষধ- কিন্তু এই ক্রীম ব্যবহারে উকুন দূর হয়। একটি চিরুনির সাহায্যে সামান্য ক্রীম মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। তবে ক্রীম যেন বেশী না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে সামান্য অর্থাৎ ২ চামচ পানি ব্যবহার করতে পারেন। তারপর আধাঘন্টা পাখা দিয়ে মাথায় বাতাস করতে হবে। এবার স্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। আবার ১ সপ্তাহে পর যদি প্রয়োজন হয় দিতে পারবেন।

উকুন দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি

উকুন দূর ঘরোয়া পদ্ধতি সবচেয়ে নিরাপদ, আর তা হলো- মাথায় ব্যবহারের নারিকেল তেলে প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকটি ন্যাপথেলিন (কর্পুর) গুড়া করে তাতে ১-২ চামচ মেথি গুড়া মিশিয়ে নিবেন। সপ্তাহে ৩ দিন এই তেল মাথায় ব্যবহার করবেন, মাথায় উকুন হবেনা। এই পদ্ধতি উকুনের প্রতিরোধক হিসাবেও কাজ করে।

উকুন থেকে মুক্তি পেতে যা করতে হবে

উকুন থেকে মুক্তি পেতে যা করতে হবে- নিয়মিত মাথায় স্যাম্পু করবেন। প্রতিদিন নিয়মিত মাথা আছড়ে নিবেন। গোসলের পর মাথার চুল তারাতারী শুকানোর ব্যাবস্থা করবেন। ভেজা চুলে উকুনের বংশ বিস্থার করতে সহায়তা করে। মাথায় খুসকি থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করবেন।

আমাদের পরামর্শে মাথার উকুন থেকে মুক্তি পেলেন কিনা ব্যবহার শেষে কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোন তথ্যে ভুল থাকে তাও জানালে আমরা উপকৃত হবো। আমরা চাই আমাদের পরামর্শ যেনো শতভাগ সঠিক হয়। তাই সবার মতামতকে প্রাধান্য দেই। আরো ভালো পরামর্শ থাকলেও জানানোর অনুরুধ থাকলো।

Leave a Comment