জণ্ডিসের ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম

কার্যকর কিছু জণ্ডিসের ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত জানিয়ে দেয়ার চেস্টা করবো। সেই সাথে জানতে পারবেন জণ্ডিসের লক্ষন ও উপসর্গ কি, জন্ডিস হলে কি করবেন ইত্যাদি।

জন্ডিসের লক্ষন ও উপসর্গ কি

জন্ডিস হলো লিভারজনিত একটি রোগ, যা রক্তে বিলুরুবিনের পরিমান বেড়ে গিয়ে উপসর্গ হিসাবে দেখা দেয়। জণ্ডিসের মুল লক্ষন হতে পারে উপুর পেটে ব্যথাসহ খাবারে অরুচি, খাবার সামনে এলে বমিভাব সহ খাবারের প্রতি অনীহা। প্রস্রাবের সাথে বিলুরুবিন যায়, তাই প্রস্রাব হলুদ বর্ণের হয়, চোখ হলদেটে হওয়া ইত্যাদি।

জণ্ডিস হলে কি করবেন

জন্ডিসের এ্যালোপ্যাথিক তেমন চিকিৎসা নাই, শুধু মাত্র পূর্ণ বিশ্রামে জণ্ডিস ভাল হবে এই উক্তিটি এলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা বলে থাকেন। অথচ দীর্ঘদিন জণ্ডিসে ভুগতে থাকা রোগীরা প্রায়ই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। কারন, জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে লিভারে বিভিন্ন প্রদাহের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকে লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

তাই জন্ডিস হলে কিছু না পারলেও ঘরোয়া চিকিৎসা নেয়া জরুরী। শুধু বিশ্রামে ভাল হবে, এই আশায় বসে না থেকে অনেক ভালো চিকিৎসা আছে, যা জন্ডিসে খুব কার্যকর। এই চিকিৎসা ছাড়াও ডাবের পানি, আখের রস, বা গুড়, লাল চিনির সরবত, ইসুবগুলের ভুষি, কানাইডিঙ্গা ছালের রস ইত্যাদির মাধ্যমে ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারেন।

জন্ডিসের প্রধান চিকিৎসা কি

জন্ডিসের প্রধান চিকিৎসা পূর্ণ বিশ্রাম এবং লিভারের যত্ন নেয়া। যা খেলে লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা হতে পারে তা না খেয়ে নরম খাবার অথবা যা সহজে হজম হয় এগুলো খাওয়া। যেমন- নরম ভাত, লাউ, শিম, পেঁপে ও পাকা ফল ইত্যাদি। তবে শক্ত ও ভাজাপোড়া এবং অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার জন্ডিসের জন্য ক্ষতিকর।

জন্ডিসের জন্য কোন ঔষধ ভালো

জন্ডিসের জন্য এ্যালোপ্যাথিক এর চেয়ে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ ই ভালো, যদি সেটা ভালোমানের কোম্পানি হয়ে থাকে। যেমন- হামদর্দ, ইটি ল্যাব, ইবনে সিনা, ফেনী দাওয়াখানা, সাধনা ঔষধালয়, ফেন্ড্রাগস, এস বি ল্যাবরেটরি, জেসন ইউনানি ডিভিশন, ডিপলেইড ইউনানি ডিভিশন ইত্যাদি।

হামদর্দ এর জণ্ডিসের ঔষধের নাম

হামদর্দ এর জণ্ডিসের ঔষধের নাম ইকটর্ন দীনার। ইউনানি ফর্মুলার দীনার ফর্মুলায় উৎপাদিত ইকটর্ন দিনার লিভারজনিত জন্ডিস, প্লিহা বৃদ্ধি, যকৃতের প্রদাহ সহ হজম বৃদ্ধিতে কার্যকর।
ইকটার্ন দিনার খাওয়ার নিয়ম – ২-৪ চামচ ইকটার্ন দিনার দৈনিক ৩ বার অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১-২ মাস সেবন করতে হয়।

ফেনী দাওয়াখানার জণ্ডিসের ঔষধ

ফেনী দাওয়াখানা একটি আয়ুর্বেদীক ঔষধ প্রস্তুতকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের উৎপাদিত জণ্ডিসের ঔষধের নাম ফেনী জিগার। যা দীর্ঘদিন যাবৎ জন্ডিসের মহৌষধ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে আসছে। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক কবিরাজগণের মতে, লিভারের জটিল সমস্যায়ও জিগার খুব কার্যকর। বহু সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদেরকে জিগার প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ফেনী জিগার সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

ফেনী জিগার সিরাপ জণ্ডিস ও লিভারের তীব্রতা অনুযায়ী ৪-৬ চামচ ঔষধ দিনে ৩-৪ বার সেবন করা যাবে। এগুলো জন্ডিসের তীব্রতা দেখে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাত্রা ঠিক করবেন। সাধারণ মাত্রা ৩ চামচ করে ৩ বার ১-২ মাস পর্যন্ত সেবন করতে হয়।

সাধনা ঔষধালয়ের জণ্ডিসের ঔষধ

সাধনা ঔষধালয়ের জন্ডিসের ঔষধের নাম সাধনা রোহিতকারিষ্ট। অন্যান্য অনেক আয়ুর্বেদিক কোম্পানির রোহিতকারিষ্ট থাকলেও সাধনা রোহিতকারিষ্ট জণ্ডিসের ঔষধ হিসাবে চমকপ্রদ কাজ করে। তবে তাদের রোহিতকারিষ্টের সাথে সাধনার আমলকি রসায়ন ঔষধটাও খেতে হয়। লিভারজনিত যেকোন সমস্যা, প্লিহা বৃদ্ধি, লিভার ফুলে যাওয়া, লিভার শক্ত ও শুকিয়ে যাওয়াসহ লিভার সিরোসিসে কার্যকর।

সাধনা রোহিতকারিষ্ট ও আমলকি রসায়ন খাওয়ার নিয়ম প্রতিটি সিরাপ থেকে ৩-৪ চামচ করে ঔষধ ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার ২ মাস সেবন করতে হয়। অথবা কোন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

এছাড়াও এলোপ্যাথিক আরসোকল ৩০০ মিগ্রা টেবলেট যেকোন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে পারেন। তবে এবিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ না খাওয়াই ভাল।

জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবেনা

জন্ডিস হলে অবশ্যই ভারী পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকবেন। ধুম পান, চা, কফি, তৈলাক্ত, অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার, শক্ত খাবার, সফট ড্রিংস খেতে পারবেননা। এগুলো জণ্ডিসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

জণ্ডিসের ঔষধের চেয়ে প্রতিরোধ বেশী কার্যকর, তাই অপরিশোধিত পানি, প্রোটিনের ঘাটতি থেকে নিজকে রক্ষা করুন। জণ্ডিস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। আশা করি জণ্ডিসের ঔষধের নাম সহ বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আরো কিছু জানার আগ্রহ থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।

জণ্ডিসের ঘরোয়া ঔষধ কি

জণ্ডিসের ঘরোয়া ঔষধ নিজেই তৈরি করতে পারবেন, যদি গাছটি চিনতে পারেন। গাছটির নাম হলো কানাইডিংগা। এই কানাইডিঙ্গা গাছের ছাল ২ কেজি পরিমানে নিতে হবে এবং ৪ কেজি পানি নিয়ে জ্বাল দিয়ে তা অর্ধেক করে নিতে হবে। তারপর এগুলো ছেঁকে পরিস্কার বোতলে ভরে প্রতিদিন ৪ চামচ ঔষধ সমপরিমান পানি সহ দিনে ৩ বার ১০-১৫ দিন খেতে হবে।

কি খেলে জন্ডিস কমে

জন্ডিস কমানোর কিছু খদ্য আছে যেমন- কামরাঙ্গা, আখের রস, ডাবের পানি, ত্রিফলার জল, আখের গুর ইত্যাদি। তবে কামরাঙ্গা বেশি খাওয়া যাবেনা, কারন কামরাঙ্গা বেশি খেলে কিডনীতে এফেক্ট পরতে পারে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩-৪ টি এভাবে ৭-১০ দিনের বেশি না। এছাড়া অন্যান্য সবকিছুই বিনা বাঁধায় খেতে পারবেন।

জন্ডিসের হোমিও ঔষধ কি

জন্ডিসের হোমিও ঔষধ অনেকগুলো, এর মধ্যে সিয়ানুথাস ও সেলিডোনিয়াম বেশি কার্যকর। অনেক কোম্পানি এই দুইটিকে কম্বাইন্ড করে পেটেন্ড ঔষধ তৈরি করেছে। আপনি চাইলে ৩০ মিলি সিয়ানুথাস আধালিটার টিউবয়েলের পানিতে গুলে ৩ চামচ করে ৩ বার ১০ দিন খেতে পারেন। অন্যান্য ঔষধের সাথেও সিয়ানুথাস খেতে পারবেন, তবে ১ ঘন্টা ব্যবধান রাখতে হবে।

আরো পড়ুন – জক্স সিরাপ কিসের ঔষধ

Leave a Comment