ইসুবগুলের ভুষির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম ইসুবগুলের ভুসি আমাদের সকলের কাছেই কম বেশি পরিমাণে পরিচিত। বিশেষ করে মুরব্বীদের কাছ থেকে যারা ঔষধী দীক্ষা নেন, তারা ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা না জানার কথা নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই উপকারী খাবারটা আমরা খুব বেশি একটা গুরুত্ব দিয়ে খেতে চাই না। কিন্তু এটা আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য বেশ ভালো ভাবে কাজ করে থাকে। ছোট-বড় অনেকে আছে যাদের অসুখের সমাধান মেলে নিয়মিত ভাবে ইসুবগুলের ভুসি খেলে।
ইসুবগুলের উপকারিতার কথা যদি আপনি চিন্তা করেন তবে আপনি ও নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস নিজের মধ্যে গড়ে তুলবেন। আপনি যদি ইসুবগুলের ভুষির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তবে আজকের লেখাটা সম্পূর্ণ পড়বেন।
ইসবগুলের ভুসি কি ?
ইসুবগুলের ভুষি বীজের খোসার সাথে থাকে, যেটাকে আমরা সকলে ইসবগুলের ভুষি বলে জানি। বিদেশি বাজারে এটাকে সিলিয়াম হাস্ক (Psyllium husk) বলা হয়ে থাকে।
গ্রীক ভাষায় ‘সিলা’ (psylla) অর্থ এক রকমের মাছি, ডানাহীন ফ্লি-মাছি। ইসবগুলের বীজ দেখতে এবং আকারে অবয়বে অনেকটা ফ্লি-মাছির মতো দেখতে, যার কারনে ইংরেজিতে এই নামে পরিচিত।
ইসবগুলের ভুষির পুষ্টিগুণ
ইসুবগুলের ভুষিতে মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান। আর সেই সমস্ত উপাদান গুলো আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। ১ টেবিল চামচ ইসুবগুলের মধ্যে রয়েছে ৫৩% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রামের মত আছে ক্যালসিয়াম, আর তারপরে এর সঙ্গে ০.৯ মিলিগ্রামের এর মত রয়েছে আয়রন।
প্রত্যেকদিন কি পরিমানে ইসুবগুলের ভুসি খাবেন?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুষি খাবার খেলে কোন রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয় না। ইসুবগুলের ভুষি আপনারা প্রত্যেক দিন ১ টেবিল চামচ করে ৩ বার পর্যন্ত খেতে পারেন। তবে এটাকে অবশ্যই আপনাদেরকে পানির মধ্যে মিশিয়ে এরপরে খেতে হবে। আর তার সঙ্গে আপনাকে সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার মত সমস্যা আমাদের অনেকেরই থাকে। যাদের এই সমস্যা আছে তাদের এই সমস্যাটি দূর করার জন্য ১টি উপকারী খাবার হল ইসুবগুলের ভুষি। এটা যদি নিয়মিত ভাবে খেতে পারেন তবে আপনাদের প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনারা আখের গুড়ের সাথে ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খাবেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন। এটা আপনারা সকালে এবং বিকেল বেলা খেতে পারেন। এভাবে যদি ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারেন তবে অনেক উপকার পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ইসুবগুলের ভুষি খাবেন
কোষ্ঠকাঠিন্য আসলে একটি কঠিন অসুখ। অনেকেই এই সমস্যাকে অতিসাধারণ মনে করে থাকেন, তবে এটা কিন্তু মোটে ও কোন সাধারণ সমস্যা নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে শরীরের নানান রকমের সমস্যা দেখা দেয়। ইসুবগুলের ভুষি এসমস্থ রোগের আদর্শ টনিক হিসাবে কাজ করে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে ইসুবগুলের ভুষি কতটা কার্যকর
আমাদের দেশের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর এবং ভুলভাল খাবার খাওয়ার কারণে মূলত এই সমস্যা হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য সবথেকে ভালো একটি ঘরোয়া উপায় হতে পারে ইসুবগুলের ভুষি খাওয়া। কারণ এটা খেলে পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে দেয়।
আর যে কারণে অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করতে পারে। ইসুবগুলের ভুষি হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সাহায্য করতে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য একটি গ্লাসের মধ্যে ঠান্ডা দুধ নিবেন এবং তারপরে দুই চা চামচ ইসুবগুল মিশিয়ে খেয়ে নেবেন, তাহলেই হবে। আর এইভাবে যদি আপনারা নিয়মিত ভাবে খেতে থাকেন তবে আপনারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি পাবেন।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে ইসুবগুলের ভুষি
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ইসুবগুল। ইসবগুলের ভুসি দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন! তাহলে ডায়রিয়া হতে খুব সহজেই মুক্তি পেয়ে যাবেন। দইয়ের ভিতরে রয়েছে প্রোবায়োটিক যেটা আমাদের পাকস্থলীর ইনফেকশন সারানোর জন্য কাজ করে থাকে।
এদিকে ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতেও সাহায্য করে। যার ফলে ডায়রিয়ার সমস্যা অনেক তাড়াতাড়ি সেরে যায়। ডায়রিয়া হলে প্রতিদিন অত্যন্ত দুইবার ভরা পেটে তিন টেবিল চামচ দই এবং দুই চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ইসুবগুলের ভুসি যদি নিয়মিত ভাবে খান তবে সেটা আপনাকে আমাশয় এর সমস্যা থেকেও মুক্তি দিবে।
ইসুবগুলের ভুষি হার্ট ভালো রাখতে কাজ করে
হার্ট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ভাবে সব ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার অভ্যাস করেন। কারণ ইসুবগুলের ভুষির মধ্যে থাকা খাদ্য-আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ হতে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এটা আমাদের পাকস্থলীর দেয়ালে ১ ধরনের পাতলা স্তর সৃষ্টি করে দেয়। যা খাদ্য হতে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়, বিশেষ করে বলতে গেলে রক্তের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাছাড়া ও এটা আমাদের রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দেওয়ার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যার ফলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টির আর কোন রকমের ভয় থাকে না। আশা করি, বুজতে পারছেন।
ইসবগুলের ভুষি কিভাবে খেতে হয় ?
ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়মঃ ২ চা চামচ পরিমানে ইসবগুলের ভুসি ২৫০ মিলি কুসুম গরম পানির সাথে ১ থেকে ২ চা চামচ লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে নিবেন, এরপরে সকালে নাস্তার পরে খাবেন তাহলে শরীরের ওজন অনেক কমে যাবে।
ইসুবগুলের ভুষি এক ভাবে সারা বছর ধরে খাবেন না, তাহলে আপনার পেটের মধ্যে ভুট ভুট করতে পারে, ডাইরিয়ার মত সমস্যা হতে পারে। একটানা ভাবে ৭ থেকে ১০ দিনের বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত না। কিছু কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো সেবন করতে হলে ইসবগুলের ভুসি বাধা দিয়ে থাকে।
ইসুবগুলের ভুষি কোথায় পাওয়া যায়
ইসবগুলের ভুষি আপনি আপনার এলাকার ভিতরে থাকা বাজারে গিয়ে সেখানে থাকা মুদির দোকানে জিজ্ঞেস করতে পারেন তাহলেই পেয়ে যাবেন। ইসবগুলের ভুষি দেখতে অনেক সাদা একদম চিনির মত দেখতে। ইসবগুলের ভুষি আপনি যদি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন তবে সেটা ফুলে পানির ওপর ভেসে উঠবে।
ইসুবগুলের ভুষির অপকারিতা কি
সকল জিনিসের যেমন উপকারি দিক এবং অপকারী দিক রয়েছে ঠিক সেরকম ভাবে ইসবগুলের ভুসিতে অনেক পরিমাণে উপকারিতা থাকার পরে ও এর মধ্যে কিছু পরিমাণে অপকারিতা ও রয়েছে। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম জানার সাথে সাথে আপনাকে এর অপকারী দিকগুলো সম্পর্কে ও জেনে নিতে হবে, তা না হলে আপনাকে বিপদে পরতে হবে। তাই সাবধান।
আপনারা যদি অল্প কিছু দিন হয়েছে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া শুরু করে থাকেন! আর প্রত্যেকদিন দরকার এর থেকে বেশি পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন তবে আপনার শরীরে কিন্তু অনেকগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। এই যেমন, মনে করুন –
* কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা
* পেটে ব্যথা আর ক্র্যাম্প এর সমস্যা
* ডায়রিয়া হতে পারে
* গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* হারাকনো, অম্ল
* বমি বমি ভাব এবং বমি
* পেট ব্যথা শুরু হতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
আমাদের আজকের লেখা থেকে আপনারা ইসুবগুলের ভুষির উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত সকল তথ্য জানতে পারলেন। আর এই রকমের বিভিন্ন খাবারের উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন তথ্য পেতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট এর সঙ্গেই থাকবেন।
আরও পড়ুন – মধুময় বাদামের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুলের ভুসি সহ যে মিক্সটা আছে ঐটার দাম কত?
১০০ গ্রামের প্রতি কৌটা ৯৫ টাকা