খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে সারা পৃথিবীর পুষ্টিবিদগণ নতুন করে গবেষণায় নেমেছেন, মুসলমানগণ আগে থেকেই এই ফলকে পবিত্র ফল হিসাবে জানেন। হয়ত এতো উপকারিতা জানেননা।
খেজুর হলো, মহান সৃষ্টিকর্তার দেয়া এক আশ্চর্য ফল। এর মধ্যে যে কত পুষ্টি এবং অবাক করা সব উপকারিতা তা জানলে আপনিও প্রতিদিন আপনার ডায়েটে খেজুর রাখতেই চাইবেন।
খেজুরের পুষ্টিগুণ কি
সুস্বাদু এবং বেশ পরিচিত ১টি ফল, যেটার মধ্যে ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। খেজুর খেলে আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরে নেওয়া হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা যায় চারটি কিংবা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে রয়েছে ৯০ ক্যালোরি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার ও তার সঙ্গে আরও অন্যান্য সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান।
খেজুর শক্তির ১টি অনেক ভালো উৎস। আর তাই সেইজন্য খেজুর খাওয়ার সাথে সাথেই শরীরের সকল ধরনের ক্লান্তিভাব দূর হয়ে যায়। খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি, যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য অনেক সহায়ক।
আপনারা চাইলে প্রত্যেকদিনের খাবারের তালিকায় রেখে দিতে পারেন খেজুর।
আয়রনে ভরপুর খেজুর আপনারা চাইলে প্রতিদিন খেতে পারেন। কম করে হলেও যদি প্রতিদিন দুইটি করে খেজুর খান তবে অনেক রোগ আপনার শরীরে আর হবে না, অনেক সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। পুষ্টিবিদদের তথ্য মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের সকল কিছুই রয়েছে এই খেজুরের মধ্যে।
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা থাকলে দূর করে দেয়।
খেজুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
রেটিনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
খেজুর উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে দেয়।
হৃৎস্পন্দনের হার ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
খেজুরে কি ভিটামিন পাওয়া যায়
১. খেজুরে মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়া। খেজুরের ভিতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
২. ফাইবারও রয়েছে খেজুরের মধ্যে, আর তাই আপনারা এই ফলটিকে ডায়েটের জন্য ও রাখতে পারেন।
৩. প্রত্যেকটা খেজুরের মধ্যে রয়েছে ২০ হতে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যেটা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক সাহায্য করে।
৪. আপনাদের মধ্যে যারা রক্তস্বল্পতা এই সমস্যায় ভুগতেছেন তারা চাইলে প্রতিদিন একটি করে খেজুর খেতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু পরিমাণে আয়রনের দরকার হয়, সেটার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে দেয় খেজুর।
৫. আপনি যদি চিনি না খান তবে চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুর খেতে পারেন। চিনির বিকল্প হচ্ছে খেজুরের রস এবং গুড়।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে দিতে পারেন। তারপরে পরের দিন সকালবেলা আপনারা খেজুর ভেজানো পানি পান করবেন। আর তাহলে আপনাদের শরীর থেকে সকল ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।
৭. খেজুরে মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকমের খনিজ হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখার জন্য ও সাহায্য করে।
৮. খেজুরে লিউটেন এবং জিক্সাথিন থাকার কারণে তা রেটিনা ভালো রাখে।
খুরমা খেজুরের উপকারিতা
প্রত্যেকদিন যদি আপনি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করেন তবে আপনার শরীর থেকে খারাপ যে সকল কলেস্টোরল রয়েছে সেগুলো কমিয়ে দেবে এবং ভালো কলেস্টোরলের এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আর তাছাড়া ও উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন,যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা কিংবা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে খেজুর অনেক উপকারী একটি ফল। খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা
একটা বছরের মধ্যে ৩৬৫ দিন, কিন্তু ৩৬৫ দিনের থেকেও বেশি পরিমাণে গুন রয়েছে মরিয়ম খেজুরে। প্রাকৃতিক ভাবে আঁশের আধিক্য থাকার কারণে এর উপকারিতা এবং গুরুত্ব অনেক বেশি। গবেষকদের তথ্যমতে শুকনা খাবারের ভিতরে মরিয়ম খেজুরেই সবথেকে বেশি পরিমাণে পলিফেনল থাকে। আর যেটা আমাদের শরীরের অনেকক বিপজ্জনক রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। নিচে মরিয়ম খেজুরের কিছু উপকারী দিক তুলে ধরা হলো
যৌনদূর্বলতায় খেজুর কি উপকারি
মরিয়ম খেজুর খেলে আমাদের শরীরে স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। মরিয়ম খেজুরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকমের পুষ্টি উপাদান সেরোটোনিন নামক হরমোন উৎপাদন করার জন্য সহায়তা করে। আর যেটা মানুষকে মানসিক প্রফুলতা দেয় এবং মন ভাল রাখতে ও বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
সারাদিন রোজা রাখার জন্য পেট একদম খালি থাকে যার কারণে শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়ে থাকে। আর তখন যদি আপনি মরিয়ম খেজুর খান তবে আপনার শরীরের শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করবে। এটা আমাদের শরীরে গ্লূকোজ এর ঘাটতি পূরণ করতে কাজ করে এবং শক্তি বৃদ্ধি করে দেয়।
শরীরের রক্ত শূণ্যতা পূরণ করতে মরিয়ম খেজুরে থাকা আয়রন বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে।
আপনি যদি আপনার ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে মরিয়ম খেজুর খেতে হবে, কারণ এটা অনেক কার্যকরী ক্যানসার প্রতিরোধ করার জন্য।
মরিয়ম খেজুরে রয়েছে ডায়েটরি ফাইবার যেটা কলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সহায়তা করে।
পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ, শুষ্ক কাশি তার সঙ্গে এজমা প্রতিরোধ করতেও মরিয়ম খেজুর অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মরিয়ম খেজুর খেলে আমাদের মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
মরিয়ম খেজুর পানিশূন্যতা কিংবা ডিহাইড্রেশন দূর করতেও কার্যকরি।
মরিয়ম খেজুরের ক্যালসিয়াম দেহের হাড় এবং দাঁতের মাড়ি মজবুত করে থাকে।
মরিয়ম খেজুরের মধ্যে থাকা ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য সহায়তা করে।
আপনার যদি খাবারে অরুচি থেকে থাকে তবে মরিয়ম খেজুর খেলে আপনার মুখে রুচি আসবে।
মরিয়ম খেজুরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকমের উপাদান আমাদের ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে ও কাজ করে থাকে।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম মরিয়ম খেজুরের ভেতরে নিচের দেওয়া পুষ্টিগুণগুলো পাওয়া যায়–
ক্যালোরি ২৮২ মিলিগ্রাম
ফ্যাট ০.৪ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ৬৫৬ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেটেড ৭৫ মিলিগ্রাম
ফাইবার ৭ গ্রাম
সুগার ৬৩ মিলিগ্রাম
প্রোটিন ২ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৩%
আয়রন ৫%
ভিটামিন ১০%
ম্যাগনেসিয়াম ১৪%
কপার ১৮%
মরিয়ম খেজুরের অপকারিতা
মরিয়ম এবং অন্যান্য সব খেজুরেরই বেশির ভাগ অংশে চিনি থাকে। তাই আপনাদের যাদের শরীরের ডায়াবেটিকস রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খেজুর খাওয়া উচিত।
সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
আপনি যদি সকাল বেলা খালি পেটে খেজুর খান তবে আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে দিবেঃ খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, আর যেটা মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তুলে।
আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের সমস্যা থাকে তবে সেটা অনায়াসেই দূর হয়ে যাবে। প্রত্যেক দিনে একটি অথবা দুইটি খেজুর যদি খান তবে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারবেন খুব সহজেই।
খেজুরের জোলাব খাওয়া উপকারিতা
খেজুরের জোলাব শারীরিক ও স্নায়ুবিক দূর্বলতা দূর করার অব্যর্থ একটি খাদ্য। যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, তারা যেন প্রতিদিন খেজুরের জোলাব খান। ৬-৮ টি খেজুর ধুয়ে ১ গ্লাস পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে, একটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে ব্লেন্ড করতে হবে। তারপর যে জুসটা হয়, সেটাই খেজুরের জোলাব।
খেজুরের অপকারিতা:
সকল জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক সেরকম ভাবে অপকারিতা রয়েছে। খেজুর খাওয়ার যেমন উপকারিত রয়েছে ঠিক খেজুর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তার অপকারিতা ও রয়েছে। উপকারী ফল অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের জন্য ক্ষতি কর হতে পারে। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে খেজুর খেতে হবে।
আমাদের ভেতরে অনেকে আছেন যারা ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন, তারা খেজুর খাবার আগে কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খেতে হবে। আবার যাদের শরীরের মধ্যে পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে তারা খেজুর খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন।
পরিশেষে
তাহলে আমাদের আজকের আলোচনা থেকে আপনারা খেজুরের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন। আর আপনারা যদি এরকমের বিভিন্ন খাবারের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে প্রতিদিন আপডেট নিউজ পেতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবেন, সকলকে ধন্যবাদ এতক্ষণ ধরে আমাদের আর্টিকেলে পড়ার জন্য।
আরও পড়ুন – সেক্সের ট্যাবলেট এর নাম ও কাজ