ইটোরিক্স ৬০,৯০ ও ১২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটটি ইটোরিকক্সিব গ্রুপের এর একটি ব্যথা নাশক ওষধ। ইটরিক্স ট্যাবলেট হলো- নন স্টেরয়ডাল এন্টি ইনফ্লামেটরী ড্রাগ (NSAID) যা প্রদাহনাশক, ব্যথানাশক এবং জ্বরে অত্যান্ত কার্যকর। ইটোরিক্স নির্দেশিত মাত্রায় বা তার উর্দ্ধে সাইক্লোঅক্সিজিনেস-২ (COX-2) এর সিলেকটিভ ইনহিবিটর, যা অত্যন্ত কার্যকর এবং মুখে খাওয়ার উপযুক্ত ঔষধ। COX–2 প্রাথমিক ভাবে প্রোস্টানয়েড তৈরীতে দায়ী- যা ব্যথা, প্রদাহ এবংজ্বরের অন্যতম কারণ। পরিপাকতন্ত্রের কম ক্ষতি করে এবং অনুচক্রিকার উপর কোনরূপ ক্রিয়া না করে এ সকল ক্লিনিক্যাল লক্ষণগুলোকে ইটোরিক্সে কমিয়ে দেয় সুনির্দিষ্টভাবে COX–2 কে বাধা দিয়ে।
ইটোরিক্স ট্যাবলেট কি কাজ করে
ইটোরিক্স ৬০-১২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট নিম্নলিখিত ব্যথা ও প্রদাহ নিরাময়ে খুব কার্যকর– অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, তীব্র ও মাঝারী দাঁতের ব্যথা বা দাঁতের অস্ত্রোপচার পরবর্তী ব্যথা, শরীরে তীব্র ব্যথা এবং প্রদাহ সেই সাথে দীর্ঘমেয়াদী মাংস পেশীর ব্যথা, তীব্র গেঁটেবাত, ডিসমেনোরিয়া অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস এ ইটোরিক্স চমৎকার একটি ঔষধ।
ইটোরিক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
ইটোরিক্স ৬০ থেকে ১২০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে- প্রাপ্ত বয়স্ক এবং কিশোরদের (১৬ বছরের উপরে) অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ডিসমেনোরিয়া এবং দীর্ঘমেয়াদী মাংসপেশীর ব্যথায়, সাথে দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা থাকলে- ৬০ মি.গ্রা. টয়াবলেট দিনে একবার। রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস এবং অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিসের জন্য ইটোরিক্স ৯০ মি.গ্রা. ট্যাবলেট প্রতিদিন একবার।
শিশুদের চিকিৎসায় ইটোরিক্স দেয়া যাবে কি
তীব্র দাঁতের ব্যথা অথবা দাঁতের অস্ত্রোপচার পরবর্তী ব্যথা এবং তীব্র গেঁটেবাতের ব্যথার জন্য ১২০ মি.গ্রা. ইটোরিক্স বা টরী টয়াবলেট প্রতিদিন একবার। শিশুদের ক্ষেত্রে ইটোরিক্স ট্যাবলেট খাওয়ার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা না পাওয়ায়, তা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকবেন।
ইটোরিক্স সেবনের সতর্কতা কি
ইটোরিক্স কোন এডভান্সড রেনাল ডিজিজের রোগীদের ক্ষেত্রে দেয়া যাবেনা। যাদের ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স ৩০ মি.লি./মি. এর কম, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার খুবই সীমিত। যদি এ সকল রোগীদের ইটোরিক্স জাতীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয় তবে তাদের রেনাল কার্যকারিতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ডিহাইড্রেশন রোগীদের ইটোরিক্স দিয়ে চিকিৎসা শুরু থেকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে ইটোরিক্স এর ব্যবহার শুরু করার পূর্বে রোগীকে রিহাইড্রেট করে নিতে হবে। আগে থেকে শরীরে পানি জমার সমস্যা বা ইডিমা আছে এমন- হাই প্রেসারের রোগী অথবা হার্ট ফেইলিওর এর রোগীদের ক্ষেত্রে ফ্লুইড রিটেনশন ইডিমা অথবা উচ্চ রক্তচাপের, সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা চালাতে হবে।
বয়স্কদের জন্য ইটোরিক্স খাওয়ার সতর্কতা
এছাড়াও যে সকল রোগী আগে থেকেই খাদ্যনালীতে ছিদ্র আছে, এবং ক্ষত এবং রক্তপাত (পি.ইউ.বি) সমস্যায় ভুগছেন অথবা যাদের বয়স ৬৫ বছরের উপর এদের পি.ইউ.বি তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। আবার যে সকল রোগীদের লিভারে অকার্যকারিতার চিহ্ন বা লক্ষণ দেখা যায় অথবা লিভার টেস্টে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী লিভারের কার্যকারিতার টেস্ট করতে হবে। তারপর উক্ত ঔষধ নির্দেশিত কিনা তা বিবেচনা করতে হবে।
লিভারের সমস্যায় ইটোরিক্স খাওয়া যাবে কি
যদি দীর্ঘস্থায়ী লিভারের কার্যকারিতা টেস্টে অস্বাভাবিকতা (স্বাভাবিক মাত্রার তিন গুন উপরে) দেখা দেয় তবে ইটোরিক্স দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর আগে থেকে চিকিৎসা চললে অবশ্যই এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। যাদের তীব্র শ্বাসকষ্ট, চামড়ার ফুসকুড়ি ও নাশিকা প্রদাহ আছে এবং স্যালিসাইলেট অথবা নন সিলেকটিভ সাইক্লোঅক্সিজিনেস ইনহিবিটর ব্যবহারের ফলে সেসব সমস্যা আরো বেড়ে গিয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে ইটোরিক্স জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। এই ট্যাবলেট জ্বরের উপসর্গ বন্ধ করে দিতে পারে, জ্বর হচ্ছে সংক্রমণের উপসর্গ। তাই রোগীর ইনফেকশনের চিকিৎসায় এর ব্যবহারে চিকিৎসকের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ইটোরিক্স এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইটোরিক্সের সাধারনত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে মুখের শুষ্কতা, স্বাদে রুচি কমে যাওয়া, মুখে ক্ষত হতে পারে, পেট ফেঁপে যেতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে, মুখের স্বাদ এবং ওজনের পরিবর্তনসহ বুকে ব্যথা, দূর্বলতা, শরীরের কোন অংশে জ্বালা পোড়া করা, ইনফ্লুয়েঞ্জার মত লক্ষণ এবং মাংসপেশীর ব্যথা অনুভব।
ইটোরিক্সের ড্রাগ ইন্টারাকশন
ইটোরিক্সের সাথে ড্রাগ ইন্টারাকশন হলো- ওয়ারফেরিন, মিথোট্রেক্সেট, রিফামপিসিন, ডাইইউরেটিক্স, এসিই ইনহিবিটরস, জন্মবিরতিকরণ পিল, লিথিয়াম এবং এসপিরিন এর ড্রাগ ইন্টারাকশন থাকতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ইটোরিক্স ট্যাবলেট কি খাওয়া যাবে
গর্ভাবস্থায় অন্যান্য ওষুধ যেগুলো প্রোস্টাগ্লান্ডিন সংশ্লেষণকে বাধা দেয় সেগুলোর মতো গর্ভাবস্থার শেষ ভাগে ইটোরিক্স ট্যাবলেট এর ব্যবহার পরিহার করতে হবে, কারন এটা ভ্রুনের ডাক্টাস আরটেরিওসাসকে অপরিণত অবস্থায় বন্ধ করে দিতে পারে। ইটোরিক্স গর্ভাবস্থায় নির্দেশিত নয়। কিন্তু ভ্রুনের সম্ভাব্য ঝুঁকি না হলে গর্ভাবস্থার প্রথম দুই ট্রাইমেস্টারে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নয়। স্তন্যদানকালে ইটোরিক্স মাতৃদুগ্ধে নিঃসৃত হয় কিনা জানা যায়নি। এজন্য উক্ত ঔষধ সেবন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- কালোজিরা বা কালোজিরার তেলের উপকারিতা