আদার উপকারিতা কি জানতে পুরো লেখাটা পড়ে নিবেন। আদা বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় মসলাজাতীয় কন্দ। রান্নার মশলা হিসেবে সবার কাছে আদা বহুল পরিচিত। এছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে রয়েছে আদার ব্যবহার। আসুন আদা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
আদাশুঠ কি এবং এর কাজ কি
আদাকে শুকনো অবস্থায় শুঠ বা শুঁঠি বলা হয়। আদাশুঠ আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বহু কাজে ব্যবহৃত হয়। এখনো বাজারে কিছু কিছু দোকানে জিনজার নামক একটা কৌটা পাওয়া যায়, আগে এগুলো ২ টাকা করে ছিল। এখন জানিনা কত?
তবে এই জিঞ্জার একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল। ধূমপানের নেশা ছাড়ার জন্য এগুলো ব্যাবহার হতো।
আদার পরিচয়
আদা এক প্রকার বর্ষজীবী কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। গাছ ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতাগুলো সবুজ ও সুন্দর ভাবে সাজানো এবং সুবিন্যাস্ত এবং ৫ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফুল প্রায় দেখাই যায় না এবং ফল হয় না। এর কন্দ বা শিকড় ব্যবহার করা হয়।
আদা কি উপকারে আসে
সাধারণত কাঁচা অথবা শুষ্ক পাউডার আকারে আদার কন্দগুড়ো ব্যবহার হয়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে আদার গুঁঠের ব্যবহার বেশী। কোনো অংশ কিভাবে ব্যবহৃত হয়। তা সুবিন্যস্ত ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
খাবারে অরুচি থাকলে আদা কিভাবে খাবেন
খাওয়ায় অরুচি হলে সিকি কাপ অর্থাৎ এক কাপের চার ভাগের একভাগ পানিতে ২ চামচ আদার রস ও সামান্য লবণ মিশিয়ে ১০/১৫ মিনিট মুখের ভিতর কিছুক্ষণ রেখে দিলে খাওয়ার রুচি ফিরে আসে। খাওয়ার আগে বিট লবণ দিয়ে একটু আদা চিবিয়ে খেলে পেট ফাঁপা দূর হয়, ক্ষুধা ও হজম শক্তি বাড়ে, মুখে বিরসতা, জিভ ও গলার কফ, জড়তা কেটে যায়।
সর্দি-কাশিতে আদার উপকারিতা
সর্দি ও জ্বরে আদার রসে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। প্রচলিত একটা নিয়ম আছে, ঠান্ডা-কাশিতে একগ্লাস কুসুম-গরম পানিতে তিন চার চামচ আদার রস, ৩-৪ চামচ আদা-লেবুর রস ও চার চামচ মধু মিশিয়ে সকাল ও রাতে ২-৩ দিন শরবত খেলে কাশি কমে যায়। এছাড়াও কাচা আদা টুকরো করে একটু লবন ছিটিয়ে আস্তে আস্তে খেলে গলায় খুসখুসে ভাব থাকেনা।
শরীর ঢাকা ঢাকা হয়ে ফুলে উঠলে (যাকে চলতি ভাষায় বলে আমবাত) পুরনো গুড়ের সাথে আদার রস মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
পুরানো আমাশয়ে এক গ্রাম আদার শুঁঠের গুঁড়া গরম পানির সাথে খেলে খুব উপকার হয়।
বসন্ত রোগে আদার উপকারিতা কি
বসন্ত রোগে এক চা চামচ আদার রসে এক চা চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে বসন্তের গুটি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। বসন্তের গুটি যত তারাতারী বের হবে, তত তারাতারী বসন্তও ভালো হবে। এগুলো নিয়ে অন্য এক সময় আরও কিছু লিখবো।
আদার আয়ুর্বেদিক গুনাগুন
আদা বা আদার শুঠ ক্ষুধামান্দ্য, অরুচি, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা, পেটে বায়ুজনিত ব্যথা, বমি, কফ-কাশি, স্বরভঙ্গ, ইত্যাদি জনিত রোগে আদা খুব উপকারী।
আদার আরও কিছু উপকারিতা
ছাগলের দুধের সাথে আদার রস মিশিয়ে খাওয়ালে হিক্কা থেমে যায়। কোন জায়গায় কেটে গেলে সেখানে একটু আদা শুঁঠের গুড়া টিপে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে ও কাটার ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
এছাড়াও আদার রস অত্যন্ত জনপ্রিয়ভাবে পেট ফাঁপা, বমন, স্বরভাঙ্গা, কাশি, গলা খুসখুস করা, কোষ্ঠকাঠিন্যে, কান ব্যথা ও মাথা ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
আদা খাওয়ার নিয়ম
১-২ গ্রাম আদা পানিতে ছেড়ে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে নিবেন। তাতে জোয়ান, মধু, ও ভিটলবন মিশিয়ে দিনে ২ বার। এভাবে নিয়মিতই খেতে পারেন অথবা কমপক্ষে ১৪ দিন খেলে নির্দিষ্ট রোগের উপকার পাওয়া যায়।
আদার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি
নির্দেশিত মাত্রায় আদা খেলে তার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা নয়। কিন্তু খালি পেটে ৬ গ্রামের বেশী আদা বা আদাশুঠ সেবনে পাকস্থলীতে জ্বালাযন্ত্রণা দেখা দিতে পারে। হৃদপিণ্ডের ছন্দহীনতা ও স্নায়ু অবসাদ হওয়ার আশংকা থাকতে পারে। তবে এগুলো বিরল ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
আদার লৌহ পাউডার তৈরীর ফর্মুলা
আদাশুঠ, পিপুল, গোলমরিচ, হরতকি, বহেরা, আমলকি, মুতা, বিড়ংগ, চিতামুল, লৌহভস্ম, সমানভাবে সবগুলো উপাদানের গুড়া বা পাউডার ভালভাবে মিশিয়ে একটি কাচের বৈয়ামে সংরক্ষণ করে সকাল ও রাতে ১ চামচ করে সেবন করলে, এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দূর হবে।
আদার বদহজম উপশম মিক্স
আদাশুঠ, মরিচবীজ, গন্ধবাদুল, মুসব্বর সামান্য বেশী নিতে হবে, সমপরিমান নিয়ে তাতে প্রতি ১০০ গ্রামের পাউডারে কাজুপট অয়েল ৪৫ মিলি মিশিয়ে রোজ দুইবার ১ চামচ করে সেবন করলে বদহজম ভাল হবে, খেতে হবে ১ মাস পর্যন্ত।
আরো পড়ুন – কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম