হাতিশুর গাছের উপকারিতা কী

হাতিশুর গাছ এর উপকার কী এবং এই গাছের শিকড় খেলে আমাদের দেহে কী ভাবে উপকার করবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পুরনো দালান ঘেঁষে কিংবা রাস্তার ধারে অন্য আগাছার মাঝে এ গাছটি দেখা যায়। এ গাছের বাঁকানো পুষ্পদণ্ডে ফুটে থাকে সাদা সাদা ফুল। গজদন্ত অর্থাৎ হাতির দাঁতের মতো শুভ্র এই ফুল।গাছটি আগাছার সঙ্গে এখানে সেখানে জন্মায় তাই সাধারণের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। মোটামুটি এক দেড় ফুট লম্বা হয়। গাছের কাণ্ড ফাঁপা, নরম। সারা দেহে ছোট ছোট রোম আছে। গাছের ওপরের দিকের কাণ্ড চৌকো, নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত গোলাকার। সংস্কৃত নাম শ্রীহস্তিনী।

বৈজ্ঞানিক নাম হেলিওট্রোপিয়াম ইনডিকাম Heliotropium indicum, এবং ইংরেজি নাম ‘Indian heliotrope’।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস মাপার মেশিন এর দাম কত ২০২৪

হাতি শুঁড় গাছের উপকারিতা

দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ নিরাময়ে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয়। ফোলায়  পাতা বেঁটে অল্প গরম করে ফোলায় লাগালে, ফোলা কমে যায়। জ্বর ও কাশিতে এই গাছের মূল জলের সঙ্গে ফুটিয়ে ক্বাথও তৈরি করে ব্যবহার করা হয়। বিষাক্ত পোকার কামড়ে – পাতার রস লাগালে জ্বালা এবং ফোলা কমে যায়। আঘাতজনিত ফোলায় – পাতা বেঁটে অল্প গরম করে লাগালে, ফোলা এবং ব্যাথা কমে যায়।

যাদের সর্দি লাগবে তারা এই হাতিশুড়ের পাতা সেচে দুই চামচ পরিমাণ রস খেতে পারেন এতে করে আপনার সর্দি ভাল হবে। টাইফয়েড জ্বরে: টাইফয়েড রোগে এই উদ্ভিদটির পাতা হতে পারে কার্যকরী সমাধান। এর পাতার রস হালকা গরম করে পানিতে মিশিয়ে খেলে  টাইফয়েড ভাল হয়। একজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুড় গাছের পাতা থেতলে আক্রান্ত স্থানে দিন।এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে একজিমা সেরে যাবে।

রিউম্যাটিক বাতে: রেড়ির তেলের সঙ্গে পাতার রস মিশিয়ে পাক করে গাঁটে লাগাতে হয়। দাঁতের মাড়ি ফোলায়:দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাতিশুরের মূল চিবালে মাড়ি ফোলা কমে যায়। কাটা ছেঁড়া: কাটা ছেঁড়া স্থানে হাতিশুরের পাতা থেতলে রস দিতে হবে এতে কাটা ছেঁড়া ঘুচে যাবে।

ব্রন: ব্রন হলে বা এর দাগ হয়ে গেলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে দুপুরে গোসল করতে যাবার ১ঘন্টা আগে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সারে এবং নতুন করে আর ব্রণ হয় না। ফ্যারিঞ্জাইটিস রোগে – পাতার রস অল্প গরম জলে মিশিয়ে গার্গল করা।

হাতি শুর গাছের ভেষজ উপকারিতা

এই গাছে শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানবো। তার আগে আমাদের জানতে হবে হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকার কি। হাতিশুর গাছটি একটি ছোট ধরনের উদ্ভিদ। হাতিশুর গাছ রাস্তার আশেপাশে আগাছা হিসেবে অনেক দেখতে পাওয়া যায়। ফুলগুলো সাদা রংয়ের এবং পাতা সবুজ রংয়ের হয়ে থাকে।

হাতি শুর গাছটি এতটা যে ভেষজ গুণ সম্পন্ন তা আমরা অনেকেই জানি না। হাতি শুর গাছের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন ধরনের উপকার রয়েছে। হাতি শুর গাছের সম্পর্কে আমরা এখন যে উপকারিতা গুলো বলবো তা আমাদের বিভিন্ন রকম সমস্যায় খুবই কার্যকর। বিষাক্ত কোন পোকামাকড় কামড় দিলে রস ব্যবহার করলে ব্যথা ভাল হয়ে যায়। ঠান্ডার সময় সর্দি কাশি লেগে গেলে গাছের রস সর্দি কাশির ওষুধ পাওয়া যায়।  ঘুরিয়ে কোন জায়গায় ব্রণের সমস্যা হলে হাতি শুর গাছের বিশেষ একটু থেতলে ব্রণ হওয়ার জায়গায় লাগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে আর ব্রণের সমস্যা থাকবে না। 

গলা ব্যথা বা ফেরিনজাইটিস জনিত সমস্যা হলে গাছের রস গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করলে সমস্যা সেরে যাবে। কোন জায়গায় ছিলে গেলে হাতিশুর গাছের অংশ থেতলে দিলে ব্যথা কমে যাবে কাটা জায়গা সেরে যাবে রিউম্যাটিক বাতের সমস্যা দেখা দিলে রেডি তেলের গরম করে রস এর সাথে মিশিয়ে ব্যাথার জাইগায় লাগালে বাত সেরে যাবে। দাঁতের মারি ফোলা জাতীয় সমস্যা দেখা দিলে গাছের রস পানিতে জালিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা উপশম হবে। টাইফয়েড জাতীয় কোন জ্বর হলে এ গাছের পাতা একটু গরম করে খাওয়ালে রোগ সেরে যায়। কোন জায়গায় আঘাত লাগলে গরম করে বেটে ফোলা জায়গায় লাগালে ব্যথা সেরে যাবে। 

জ্বর বা কাশিতেও এই কাজ খুবই উপকার। ছত্রাক জাতীয় কোন সমস্যা দেখা দিলে চামড়ার উপর চাকা চাকা হয়ে গেলে গাছের রস সেখানে লাগিয়ে দিলে ছত্রাক জাতীয় সমস্যা সমাধান হবে।

হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম

হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম, হাতিশুর গাছ সংগ্রহ করার জন্য প্রথমেই আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গাছটি যেন কম বয়সের গাছ না হয়। প্রাপ্তবয়স্ক গাছ বোঝার জন্য এমন গাছ দেখবেন যেখানে ফুল হয়েছে। ফুল যে সব কাছে হয় না মানে যেগুলো অপ্রাপ্ত বয়স্ক গাছ সেসব গাছের মূল কোন কাজে আসে না। তাই ফুলসহ হালকা হলুদ রঙের পাতা সমৃদ্ধ কাজটি নির্বাচন করবেন। এরপর গাছটির সংগ্রহ করবেন। আর হাতিশুর গাছ বড় হতে সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগে।

পরে সংগ্রহ করে মূল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।  আর এর থেকে ওষুধ বানানোর জন্য চারটি উপাদান প্রয়োজন।  একটি হচ্ছে প্রচুর গাছ দ্বিতীয়টি হচ্ছে মধু তৃতীয়টি হচ্ছে পান অংশটা হচ্ছে কালোজিরা। এই উপকরণগুলো দিয়ে বাজারে যেমন পান বিক্রি করা হয় সেভাবে পান টিকে ভাঁজ করে খেয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই হাতিশুর গাছের শিককরটি যেন ১ ইঞ্চি সাইজের হয়। প্রথমে সবগুলো উপাদান পরিষ্কার করে নিতে হবে। পরবর্তীতে প্রথমে পান নিয়ে হাতিশুর গাছের শিকড় প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নিতে হবে পরবর্তীতে এ এক চিমটি ওই পানের উপর দিয়ে দিতে হবে। শেষে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিতে হবে। 

এই ওষুধটি ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে খেতে হবে। এতে উপকার ভালো পাওয়া যায়।  আর প্রতিদিন রাতে একবার করে খেলে এক সপ্তাহ পর আপনি ফলাফল পেয়ে যাবেন।

  • হাতিশু গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম হলো,  শরীরের কোন জায়গায় ফুলে গেলে এই হাতিশুর গাছের শিকড়ের রস বের করে হালকা গরম পানিতে সেদ্ধ করে খেলে ওই ফোলা জায়গাটা কমে যাবে।  
  • কোন জ্বর ঠান্ডা কাশি হলে এই গাছের শিকড় পানিতে ফুটিয়ে ওই পানি পরবর্তীতে খেলে ঠান্ডা কাশি সেরে যায়।
  • শরীরে কোন জায়গায় আঘাত লাগলে আঘাতের স্থানে আছে শিকড় পেটে লাগিয়ে দিলে ব্যথা কমবে।

হাতিশুর গাছের শিকড় কখন খাওয়া যায়

হাতিশুর গাছের শিকড় সাধারণত ভোর বেলায় খেতে হবে। খালি পেটে না খেলে এর কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।  সকালে এই পাতা, খালি পেতে খেলে পরবর্তীতে প্রচন্ড পরিমাণে পানি সেবন করতে হবে।  এবং খাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে আর অন্য কোন কিছু খাওয়ার যাবে না। সকালে হাতিশুর গাছের শিকরের বের করে তা পানিতে গরম করে যদি মধু মিশিয়ে খাওয়া যায় তবে আরো উপকার পাওয়া সম্ভব।

এই গাছের কী কী অংশ উপকারী

হাতিশুর রয়েছে ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন, এলকালয়েড্স ও হেলিওট্রিন লেজিটিং নামক নানা ধরনের উপকারী রাসায়নিক উপাদান। পানি জমা ছোট ছোট ডোবা এলাকাগুলোতে এইসব কাজ বেশি পাওয়া যায়। হাতিশুর গাছের যেসব অংশগুলো মানুষের জন্য খুবই উপকারী সেগুলো হলো।

  • পাতা 
  • মূল 
  • কান্ড 
  • শিকড়

হাতিশুর গাছের অপকারিতা

কোন ঔষধ কোন নির্দিষ্ট রোগের জন্য খেলে যেমন রোগটা সেরে যায় তেমনি ওই ওষুধটা যদি একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া যায় তাহলে রোগটি সারার বদলে আরো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।  এর থেকেও বেশি আরো বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

তেমনি একইভাবে হাতিশুর গাছ নিয়মিত নিয়ম অনুযায়ী না খেলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমরা এখন হাতিশুর গাছের অপকারিতা সম্পর্কে জানব। হাতিশুর গাছের এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা বেশি ব্যবহার করলে বা খেলে শরীরের ভেতর অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড বার টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই মারাত্মক টিউমার পরবর্তীতে ক্যান্সারের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অবশ্যই এটি যে কোন সমস্যায় খাওয়ার আগে সব নেওয়া জরুরি।

আশা করছি হাতিশুর গাছের উপকারিতা কী এই সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন PustiGoon সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment