সাপ নিরীহ প্রানী, তবে আচমকা সামনে পড়ে গেলে, বা তার গায়ে পা লেগে গেলে তখন বাঁচার জন্য কামড়ে দেয়। মুলত এটা আত্মরক্ষার জন্যই, অথবা প্রতিপক্ষ ভেবে পাল্টা আক্রমণ সরুপ কামড়ে দেয়াই তার স্বভাব। তবে সব সাপ বিষধর কিংবা সব সাপ নির্বিষও নয়।
সাবধানতার জন্য এসব সাপ সম্পর্কে চিনে নেয়া বা তাদের কামড় কি বিষাক্ত নাকি বিষমুক্ত তা অবশ্যই জানা উচিত। গবেষনায় দেখা যায়, অনেক নির্বিষ সাপের কামড়েও বহু মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, পরে পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, শুধু মাত্র সাপের আতংকে হার্ট এর কার্যক্রম ব্যহত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সাপের বিষ ছিলনা, বা বিষের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
বিষধর সাপের কামড় বুঝার উপায় কি
বিষধর সাপের কামড় বুঝার উপায় সবসময় যে একই রকম হবে, তা ঠিক নয়। তবে কয়েকটা স্বাভাবিক চিহ্ন ও উপসর্গের মাধ্যমে বুঝা যায় যে এটা বিষাক্ত সাপ ছিল।
প্রথমত যদি সাপকে দেখতে ও চিনতে পারেন, তাহলে কোন সন্দেহ ই থাকেনা। যদি দেখতে বা চিনতে না পারেন, তবে কামড়ের স্থানে দেখে নিবেন নিচের ছবির মতো ক্ষতচিহ্নে কয়টি দাঁতের দাগ আছে।
বিষধর সাপের কামড়ে সাধরণত দুইটি দাঁতের দাগ থাকে। আবার লাল গলার ডোরা সাপের কামড়ে এবং কালাচ সাপের কামড়েও দাঁতের চিহ্ন দেখা যায়না। তাই অন্যান্য উপসর্গের উপর নির্ভর করে বুঝতে হয় এটা বিষধর সাপের কামড়।
বিষধর সাপের কামড়ের উপসর্গ কি
বিষধর সাপের কামড়ের উপসর্গগুলো- আক্রান্ত স্থানে জ্বালাপোড়া, চোখে পাতা ভাড়ী হওয়া, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, সব থেকে জুরুরি যে বিষয় গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হলো লক্ষন, কালাচের কামড় হলে, তলপেট ব্যাথা হবে, টয়লেটের বেগ আসবে কিন্তু হবে না, অস্বস্তি হবে, চোখ নেতিয়ে পড়তে চাইবে। এসব লক্ষন দেখা দেখা দিলে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হবে।
লাল গলার ডোরা সাপ কতটা ভয়ানক
বিষধর সাপগুলোর কামড়েই বিষ থাকে কিন্তু শরীর বিষাক্ত নয়, কিন্তু সিলেট অঞ্চলে লাল গলার ঢোঁরা সাপ দেখতে পাওয়া যায়, রসিদপুরসহ শ্রীমঙ্গলের বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া লাল গলা ঢোঁড়া সাপ। এরা একই সাথে বিষধর এবং বিষাক্ত। বিষধর হলেও বিষদাঁত পিছনের দিকে থাকায় সহজে কামড়াতে পারেনা। এদের শরীরেও বিষ থাকে যেটা খুবই মারাত্বক। এদের বিষের কোন এন্টিভেনম বাংলাদেশে পাওয়া যায়না। এদের কামড়ে অথবা স্পর্শে অঙ্গহানী থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সাপের বিষ কিভাবে শরীরে প্রবেশ করে
চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমোটক্সিন। ব্লাডসেল আক্রমণ করে, আর গোখরা নিউরোটক্সিন। স্নায়ুতন্ত্র আক্রমণ করবে। তাই, ব্লাড টেষ্ট করেই যেন কোন ডাক্তার সর্পবিষ সম্পর্কে ডিসিশন না নেন, এর জন্য বিশেষ অনুরুধ রইল। অনেক সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া শুধু এই টেস্ট থেকে পাওয়া রিপোর্টের উপর রোগীকে বিষমুক্ত বলার কারনে। তাই অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা খুব জরুরী।
সাপে কাটা রোগী হিসাবে কি করবেন
আমাকে সাপে কামড়েছিল কয়েকদিন আগে, এরপর থেকে কিছু স্ট্যাডি করে এসব জানতে পারলাম। সেই সাথে ডাক্তারদের মুখস্থ বিদ্যার আরও কিছু ভুল আমার খালি চোখে ধরা পড়লো- যা রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে।
যেমন- রোগীর হাত অথবা পায়ের বাঁধন খুলে এন্টিভেনম দেয়ার পরও অধিকাংশ রোগীরই মৃত্যু হতে দেখেছি বা শুনেছি।
তাই, বাধন রেখে এন্টিভেনম দেয়ার পদ্ধতি যদি থাকে- তাহলে কেন এই পাণ্ডিত্য প্রকাশ করা?
আমাকে প্রথমে একজন চিকিৎসক নির্দ্বিধায় বলে দিয়েছিল এটা পোকাড় কামড়!
আমি আশ্চর্য হই নাই।
কারন, আমি জানি যে, কয়েক বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাস হয়েছে, এখন এমনটা হবে, এটাই স্বাভাবিক!
তাই, ঐ ডাক্তারের কথায় ভরসা না করে, সারা রাত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিলাম, নার্সকে বলে রাখলাম, একটু এলার্ট থাকবেন প্লিজ।
বিষধর সাপে কামড়ালে কি করবেন
বিষধর সাপ সবসময় বা প্রতিটা আঘাতে বিষ প্রয়োগ করবে, এমনটা কিন্তু ভাববেননা। শুধু কালাচ সাপ ব্যতিত অন্য সব সাপই প্রতিটা কামড়ে বিষ প্রয়োগ করেনা বা করতে পারেনা।
বিষধর সাপের একটা বিষথলি থাকে, যা সাপগুলোর চোয়ালের অংশে।
বিষ প্রয়োগ করুক আর না ই করুক, হসপিটাল যাবেন। তবে আতংকিত হয়ে নিজের ভুলে জীবন হারাবেননা।
বাঁধন দেওয়া সম্পর্কে ঢালাওভাবে আমরা জেনে আসছি। কিন্তু কীভাবে বাঁধন দিতে হয় এবং খুলতে হয় – এই সম্পর্কে আমরা অধিকাংশ মানুষই সচেতন নয়। সর্পদংশনের ক্ষেত্রে ভুলভাল বাঁধন দেওয়া সবচেয়ে বড় ভুল পদ্ধতি। এর ফলে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। কেউ যদি ভুলভাবে বাঁধন দিয়ে দেয়, তাহলে বাঁধন খুলে হাল্কাভাবে ম্যাসাজ করে দিতে হবে। বেশি জোরে মালিশ করবেন না।
সাপ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা কতটুকু প্রয়োজন?
সাপ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা খুব প্রয়োজন, কারন কোন সাপ বিষধর এবং কোন সাপ নির্বিষ তা জানা দরকার। না হলে যেভাবে নির্বিষ সাপ নিধন হচ্ছে, তাতে আমাদের পরিবেশ খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। যেমন- দাড়াশ একেবারে নির্বিষ সাপ, এর কামড়ে কিছুই হয়না, আবার এই দাড়াশ সাপ আমাদের কৃষকের বন্ধু! কারন সে ধান ক্ষেতের ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে।
banded krait বা শাখামুটি সাপ তীব্র বিষধর হলেও বিগত ১৫ বছরে কাউকে কামড়াতে শুনা যায়নি। আসলে সে কাউকে এতো সহজে অন্য সাপের মতো কাউকে কামড়ায়না। সোজা কথা হলো শাখামুটি সাপ কাউকে কামড়ায়না। কিন্তু এই সাপ আমাদের এমন উপকার করে, তা যদি জানেন তাহলে তাকে লালন পালন করার ইচ্ছা জাগবে। শাখামুটি সাপ অন্য বিষধর সাপদের খেয়ে, আমাদের উপকার করে, বিষয়টা কি ভেবেছেন? কালাচ এর মতো তীব্র বিষধর ও নীরব ঘাতক সাপ তার বেশি প্রিয় খাবার। শাখামুটি সাপের একমাত্র খাবার হলো- আরেকটি বিষধর সাপ! তাই শাখামুটি সাপকে মারবেননা।
সাপ কি প্রতিশোধ নিতে পারে
সাপ প্রতিশোধ নিতে পারে শুধু সিনেমাতে, বাস্তবে সাপ কখনো প্রতিশোধ নিতে পারেনা। কারন সাপের তো ব্রেইন ই নাই, যার কারনে তার কোন স্মরণ শক্তি নাই, এবং সে কোন কিছুই মনে রাখতে পারেনা। বলতে পারেন সিনেমাতে তো অন্য রকম দেখি, সাপ পোষ মানে, সাপ তার সঙ্গীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয় ইত্যাদি। এগুলো যারা বানায় তারা হিন্দু ধর্মের বই পড়ে গল্প তৈরি করে।
এজন্য ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) সাপ মারতে হুকুম দিয়েছেন। মুলত এটা অনেকটা হিন্দু ধর্মের গল্পের প্রতি রাগ করেই সুন্নাত হিসাবে আদেশ করেছেন বলেই আমাদের ধারনা। তিনি বলেছেন, যে ব্যাক্তি সাপের প্রতিশোধের ভয়ে সাপ মারলোনা সে শিরক করলো, অর্থাৎ সে মুসলমান থেকে বের হয়ে গেলো। এতে কি বুঝলেন? বিজ্ঞানভিত্তিক ধর্ম ইসলাম আজ থেকে ১৫০০ বছর আগেই জানতে পেরেছে সাপ কখনই প্রতিশোধ নিতে পারেনা।
সাপের পিছু নেয়া অর্থাৎ সাপ দেখে আসলে সে আপনার ঘরে এসে রাতে কামড়াতে পারে এমন ধারনাও আগের মতোই একটি শিরক। এটা বিশ্বাস করা ভুল, এমন ধারনা শুধু হিন্দু ধর্মেই আছে। তাই আমাদেরকে এসব বিভ্রান্তিকর ভুল ধারনা থেকে বের হতে হবে। সাপ কখনই পিছু নিতে পারেনা। কারন সে কি করে বুঝবে? আপনার ঘর কোনটি? তার এমন কোন বিশেষ ক্ষমতা নেই।
কালনাগিনী সাপের কামড়ে কি মৃত্যু হয়
কালনাগিনী সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারেনা। কারন এই সাপ সামান্য মৃদু বিষধর। যার কামড়ে সর্বোচ্চ একটি পিপড়ার মতো বিষক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে- তাহলে সারা জীবন যে গল্প বা গান শুনে বড় হলাম, বেহুলা কি তাহলে শুধু শুধু এতো কষ্ট করলো? লক্ষীন্দর বেচারা কি ভয়ে অজ্ঞান হয়েছিলো? নাকি বিষক্রিয়ায় কোমায় গেছিলো? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর হলো- এগুলো হিন্দু ভিত্তিক রুপকথার গল্প মাত্র। এখানে অনেক অবাস্তব গল্পের সমাহার আছে। যা আসলেই কখনো ঘটেছিলো কিনা তা বেহুলা লক্ষীন্দর এর গল্প দিয়েই বিচার করা যায়। আসলে মুল কথা হলো- কালনাগিনী সাপের কামড়ে কারো মৃত্যু হতে পারেনা। কারন এই সাপ মৃদু বিষধর।
সাপের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতা
সাপ যেন বাড়ি বা ঘরে বাসা না বাধতে পারে, সেজন্য ব্লিচিং পাউডার, কার্বলিক এসিড, গ্যাকোটাচসাবান, ফিনাইল, চিটিয়ে রাখতে পারেন। পুরাতন বস্তা, আবর্জনা স্তুপ, ঝোপঝাড়, ইঁদুরের গর্ত, ফেলে রাখা ভাঙ্গা আসবাবপত্র, দীর্ঘদিন ফেলে রাখা গাছের টুকরো ইত্যাদি পড়ে থাকলে সাপ বাসা বাধতে পারে। তাই এগুলো পরিস্কার রাখলে সাপের উপদ্রব থেকে বাচঁতে পারবেন।
আরও পড়ুন – নিরাপদ হারবাল চিকিৎসা কিভাবে নিবেন