হলুদ বর্ষজীবী কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি গোলাকার গাঁট বিশিষ্ট একটি মসলা জাতীয় শস্য। এর ভিতরের দিকটা পীতবর্ণ, পাতা এক-দেড় ফুট পর্যন্ত বড় হয়। ফুল ফিকে সবুজ ও হরিদ্রাভ হয়ে থাকে। নভেম্বর মাসে গাছে ফুল আসে এবং বছর পুর্ণ হলে ভাল মানের হলুদ সংগ্রহ করা যায়। ছায়াঘেরা স্থানে এবং গাছের নীচে হলুদ ভালভাবে বেড়ে উঠে।
ব্যবহার্য অংশ : কন্দ।
কাচাঁ হলুদের উপকারিতা কি
কাঁচা হলুদের ১৫/২০ ফোঁটা রস সামান্য লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে কৃমির উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তবে একদিন খেলেই ফল পাবেননা। আংশিক হয়ত পাবেন, পুরোপুরি ফল পেতে প্রথম সপ্তাহে ৩ দিন, তারপরের সপ্তাহে ৩ দিন খাবেন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মাত্রা কমাতে হবে।
শিশুদের তোতলানো কমানোর উপায়
অনেক শিশুর কথা বলতে আটকে যায় বা তোতলায়, সে ক্ষেত্রে ২/৩ গ্রাম হলুদের গুঁড়া ১ চা চামচ ঘিয়ে একটু ভেজে অল্প অল্প করে খেতে হবে। এতে তোতলামি কমে যায়। যেহেতু নিয়মিত প্রতিদিন ভাজা প্রায় অসম্ভব, তাই একসাথে ১০০ গ্রাম ঘিয়ে ১০০ গ্রাম হলুদ গুড়া ভেজে নিবেন। প্রতিদিন কয়েকবার অল্প অল্প করে খাওয়াবেন। কিছুদিন খাওয়ার পর দেখবেন। মুখের জড়তা কেটে যাবে। তোতলানো বন্ধ হবে, এবং স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে পারবে।
প্রশ্রাবে জ্বালা-পোড়াসহ প্রমেহ রোগে
প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার সাথে পুঁজের মত লালা ঝরলে (প্রমেহ) ঐসমস্ত রোগীর আদর্শ টনিক হিসাবে কাচ করবে এটা। এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে একটু মধু বা চিনি মিশিয়ে খেলে দারুন উপকার হয়। খাওয়ার নিয়ম প্রতিদিন সকালে ও রাতে ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত খেলে উপকার পাওয়া যায়।
এ্যালার্জিতে হলুদের উপকারিতা কি
অনেকের কোন কোন খাদ্যে এলার্জি থাকে। সেই সকল খাবার খেলে শরীরে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে, চুলকায় ও লাল হয়ে যায়। এ অবস্থায় একভাগ নিম পাতার গুঁড়া, ২ ভাগ হলুদের গুঁড়া ও ২ ভাগ আমলকি গুঁড়া একত্রে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে এক গ্রাম করে কিছুদিন খেলে উপকার হবে। এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই ।
এছাড়াও শরীরে চুলকানি হলে কাঁচা হলুদ বাটা ও নিমপাতা বাটার সাথে একটু সরিষার তেল মিশিয়ে ৩/৪ দিন গোসল করলে সেরে যায়। সুস্থ অবস্থায় এটা দিয়ে স্নান করলে চুলকানি হবার সম্ভাবনা থাকে না।
যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে
এ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে ২ গ্রাম হলুদের গুঁড়ার সাথে একটু চিনি মিশিয়ে তা দিয়ে শরবত করে খেলে হাঁপানির কিছুটা উপশম হয় ।
কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়া করে সাথে উচ্ছে পাতার রস ও সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে হামজ্বর সেরে যায় ।
চোখ উঠা রোগের ঔষধ
চোখ উঠা অনেক সময় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এবার থেকে আপনার পরিবারে কারো চোখ উঠলে অল্প পরিমাণ হলুদ ছেঁচে তার সাথে পরিমাণ মত পরিস্কার পানি মিশিয়ে ঐ পানি দিয়ে চোখ ধুলে এবং ঐ পানিতে পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো ভিজিয়ে তা দিয়ে চোখ মুছলে, চোখ ওঠা তাড়াতাড়ি সেরে যায়, তাছাড়া চোখের লালচে ভাবও কেটে যায়।
ফোড়ায় হলুদের উপকারিতা
ফোড়া উঠেছে কখনও? খুব ব্যথা হয় ফোড়া যখন আস্তে আস্তে বড় হয় এবং টাটায়। হলুদের ব্যবহার জানলে আজ থেকে আর ফোড়া উঠলে কোন ব্যাপার না।
হলুদ পোড়া ছাই পানিতে গুলে পেষ্ট করে নিবেন। আপনি জানেন? এই হলুদের ছাইয়ের পেষ্ট ফোঁড়ায় লাগালে তা তাড়াতাড়ি পাকে ও ফেটে যায়। আবার শুধু হলুদের গুঁড়া কোন ঘাতে লাগালে ঘা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় ।
মচকে গেলে কি করবেন
খেলাধুলা বা কোন কাজ করতে গিয়ে হাত পা সহ কোন অঙ্গ মচকে যেতেই পারে।
শরীরের কোন অঙ্গ মচকে গেলে বা আঘাত লাগলে ঐ স্থানে সমান্য পরিমানে- চুন, হলুদ ও লবণ মিশিয়ে একটি চামচে গরম করে নিবেন। উক্ত মিশ্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা ও ফোলা দ্রুত কমে যায়।
জোঁকে ধরলে কি করবেন
জোঁকে ধরলে জোঁকের মুখে হলুদের গুঁড়া দিল ছেড়ে দেয় এবং রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও হলুদের আছে আরও বহু উপকারী উপাদান।
যারা অধিক মদ্যপান করেন তাদের মদ্য পান করার আগে ফারমেন্টেড হলুদ গুঁড়া বা ট্যাবলেট খেলে লিভার সুরক্ষিত থাকে ।
আরও পড়ুন – নিউরো বি কিসের ঔষধ ও খাওয়ার নিয়ম